ঈদুল আজহা নামাজ আদায়ের পর পরই পশু কোরবানির পর্ব শুরু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিকেলের আগেই শেষ হয়ে যায় মাংস কাটা আর ভাগবণ্টন। এরপর চলে গরীবদের মধ্যে মাংস বিলি। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তা শেষ হয়। বিলিয়ে দেয়া মাংস সংগ্রহ করে কিছু অংশ নিজেদের জন্য রেখে একটি শ্রেণি বাদবাকি মাংস বিক্রি করে দেন। নগরীর নানাস্থানে কোরবানির মাংস বিক্রির ক্ষণস্থায়ী এরকম হাট বসতে দেখা যায়।
যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারা কম দামে এই হাট থেকে মাংস কিনে নেন। ঈদের দিনে মাংস বিক্রি এবং কেনার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট মাংসের বাজার বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছিন্নমূল ও দরিদ্র লোকজন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা ওই সব বাজারে বিক্রি করে দেন। যারা কোরবানি দিতে পারেনি তারা এবং কিছু হোটেল ব্যবসায়ীরা এ মাংস কিনে নেন।
হিসাব করলে দেখা যায়, এ বছর কোরবানির গরু কেনা-হাসিল পরিশোধ আর কসাইয়ের মজুরি দেয়ার পর কোরবানির মাংসের মূল্য দাঁড়ায় প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। কোরবানির সেই মাংসই হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।
প্রতি বছর কোরবানি শেষে বিকেলের দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে চোখে পড়ে এসব অস্থায়ী মাংসের হাট। এবারও দেখা গেল সেরকম কিছু চিত্র। শহরের অলিতে-গলিতে অস্থায়ী এ বাজারে খুব কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, জুরাইন রেলগেট, সূত্রাপুর, ধোলাই খাল, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও, রামপুরা ব্রিজ, লিংক রোড, নতুন বাজার, নাখালপাড়া রেল লাইনে এ দৃশ্যের দেখা মেলে। মূলত সকাল থেকে ভিক্ষুক এবং গরিব-অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যে মাংস সংগ্রহ করেছেন সেটাই তারা এসব স্থানে বিক্রি করছেন।
রাজধানীর ফার্মগেটে বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েক ভাগ মাংস সাজিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন মৌসুমী কসাই আমান মিয়া। তিনি জানালেন, কোরাবানির মাংস কাটার পর নিজের ও তার দলের পাওয়া মাংসের ভাগ একত্রিত করেই বিক্রির জন্যে বসেছেন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা হওয়াও মাংস নিতে নিতে নষ্ট হয়ে যাবে, তাই এসব বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
কোরবানির মাংসের এই বিক্রেতা আরও জানালেন, ঢাকায় একটি ফুড ফ্যাক্টরির শ্রমিক তিনি। কোরাবানির সময় মৌসুমী কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করেন। গত তিনচার বছর ধরেই কোরাবানির ঈদে বিকেল থেকে সন্ধ্যা তিনি ফার্মগেটে মাংসের পসরা নিয়ে বসেন। দাম চাচ্ছেন ৪০০ টাকা কেজি, তবে ৪৫০ টাকা দাম বললে বিক্রি করছেন।
আমানের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই একজন বোরকা পরিহিত মধ্যবয়সী নারী এসে দরদাম করে ৮০০ টাকায় দুই কেজি মাংস নিয়ে গেলেন।
নগরীর একাধিক মাংসের হাট ঘুরে দেখা যায়, কুরবানি দেয়ার সামর্থ নেই, বেশি দাম দিয়ে মাংস কেনারও সামর্থ নেই এবং কারো বাড়ি থেকে গোশত চেয়ে নিতে সংকোচ বোধ করেন-এমন লোকজনই কম দামে মাংস কেনার জন্য এসব হাটে আসছেন।