দেশে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার, যার বেশিরভাগই আনা হয় বিদেশ থেকে। এবার আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ব্যয়ের পুরোটাই মেটানো হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের মাধ্যমে মসলা চাষের জন্য ১১০ উপজেলা ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফলে মসলার আবাদ বাড়বে ৫ শতাংশ। উৎপাদন বাড়বে ২ লাখ ৩৬ হাজার টন। তাতে আমদানি নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উত্থাপন করা হবে। আধুনিক-টেকসই প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলাজাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ এবং শস্য নিবিড়তা ২-৫ শতাংশ বাড়ানোই এর লক্ষ্য। সেই সঙ্গে মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন জাত প্রচলন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে। মসলা গবেষণাকেন্দ্রের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ২২টি মসলাজাতীয় ফসলের ওপর সর্বমোট ৪৭টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তি, মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা; পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা; পোস্ট-হারভেস্ট প্রযুক্তিসহ উদ্ভাবিত হয়েছে আরও ৬৬টি উন্নত প্রযুক্তি। এসব মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ হলে একদিকে যেমন বাড়বে উৎপাদন, অন্যদিকে সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমাণও কমবে। একই সঙ্গে মসলার আয়ুর্বেদিক, খাদ্য ও শিল্পে ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ২ হাজার ৮৬৫টি মসলা প্রদর্শনী এবং চারা-কলম উৎপাদন ও আমদানি; ৩০২টি বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা; ৪ হাজার ২০০ রানিং মিটার সীমানাপ্রাচীর এবং ১৮৫টি পলি শেড-গার্ড, শেড-লেবার শেড ও নার্সারি শেড নির্মাণ। এ ছাড়া ২ হাজার ৬৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ৪৫ ব্যাচ এসএএও সমমানের কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ২৯ ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ ও ২ ব্যাচ বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, ১৩৫ ব্যাচ কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ এবং ১ হাজার ৬৫০টি কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মসলার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর বাজারমূল্য অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার করা হলেও মাত্র সাত ধরনের ফসল দেশে উৎপাদিত হয়। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। সেই আমদানিনির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে মসলার উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- উদ্ভিদের কুঁড়ি, ফল, বীজ, বাকল, রাইজম ও কন্দ; যা খাদ্যের রঙ, সুগন্ধি, সুম্বাদু ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়- সেগুলোই মসলা। তবে বিশ্ববাজারে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এর উচ্চমূল্য এবং কম আয়তনিক জাতীয় পণ্য। পুরো বিশ্বে ১০৯ প্রকার মসলাজাতীয় ফসল জন্মে, তার মধ্যে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান মসলা জন্মে বাংলাদেশে। অথচ দেশে ব্যবহার হয় প্রায় ৫০ ধরনের মসলা। দীর্ঘদিন এসব মসলার চাহিদার বেশিরভাগই পূরণ করা হতো আমদানির মাধ্যমে। বেশ কিছু জাতের দামি মসলা এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আবার অবৈধ পথেও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে। এ ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর সুযোগ থাকলেও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এ ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে মসলার উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা