মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ- বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ডুবছে চরও নিম্নাঞ্চলের নতুন এলাকা। পাশাপাশি নদীর তীব্র স্রোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত কয়েকদিনে উপজেলার চালুয়াবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নের প্রায় ২৯৬টি বসতবাড়ী বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই বাড়িঘর ভেঙে গৃহপালিত পশু এবং পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন ভাঙনের হুমকিতে থাকা লোকজন।
মঙ্গলবার, ২১ জুন দুপুরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর সোমবার পানি ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উল্লেখ্য থাকে যে, মঙ্গলবার, ২১ জুন সকালে সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে যমুনাপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িঘর ভাঙা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। কেউ সিমেন্টের খুঁটি তুলছেন, কেউ টিন খুলছেন, আবার দলবদ্ধভাবে কয়েকজন ঘরের টিনের চালা তুলছেন নৌকায়।
সারিয়াকান্দি উপজেলার সুজাতপুর বাওলাপাড়ার ঝরনা বেগম জানান, তার এক ছেলে এক মেয়ে বড় হয়েছে। কয়েকবার নদী ভাঙার পর এ গ্রামে তিনি বাড়ি করেছিলেন পাঁচ বছর আগে। সেই জায়গাটুকুও ভেঙে নিলো যমুনা নদী। তিনি এখন অন্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য নৌকায় ঘরবাড়িসহ তার সংসারের সবকিছু তুলেছেন। যাচ্ছেন নতুন ঠিকানায়।
একই গ্রামের বৃদ্ধ আফিজ উদ্দিন ব্যাপারী জানান, তার শৈশবকাল কেটেছে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের কর্ণিবাড়ী চরে। সেখানে তিনি ১৯ বছর ছিলেন। কর্ণিবাড়ী ভাঙার পর বাড়ি করেছিলেন একই ইউনিয়নের বিরামের পাঁচগাছি চরে। সেখানে ছয়বছর থাকার পর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাড়ি করেছিলেন এই সুজাতপুর চরে। এখানে তিনি প্রায় ৩০ বছর কাটিয়েছেন। এতবছর পর সে জমিও যমুনা নদী ভেঙে দিলো। নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিনি তার পরিবার এবং ঘরবাড়ি ভেঙে নৌকায় নিয়ে যাচ্ছেন ভিন্ন ঠিকানায়।
অজিবা বেগম জানান, তারা ছিলেন চকরথিনাথ চরে, সেখান থেকে ঘর ভেঙে এসেছিলেন বিরামের পাঁচগাছি চরে। তারপর এসেছেন এই সুজাতপুরে। এখানেও ভাঙন দেখা দেওয়ায় এখন তিনি নৌকায় তার বাড়িঘর সহ সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র তুলেছেন নিরাপদ স্থানে যেতে।
গ্রামের মোফাজ্জলের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, কর্ণিবাড়ী চরে তার জন্ম। সেখানে ভাঙার পর তার বিয়ে হয়েছিল বিরামের পাঁচগাছি চরে। সেই চর ভাঙার পর তিনি ছয়বার নদীভাঙনের শিকার হয়ে বাড়ি করেছিল সুজনের পাড়া গ্রামে। আবারো নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিনি তার বাড়িঘর নিয়ে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন চালকান্দি বেড়িবাঁধে।
বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান বলেন, গত দুদিনে আমার ইউনিয়নের বোহাইল এবং কাজলা গ্রামের ৪৬টি ঘরভিটা যমুনায় বিলীন হয়েছে। যে হারে নদী ভাঙতে শুরু করেছে তাতে কয়েকদিনে কয়েকশ ঘরভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে ভাঙন ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। এরই মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্নাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের মানিকদাইড় গ্রামে জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।