মাঝ আকাশে বিমানে আগুন, যেভাবে ১৮৫ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন পাইলট মনিকা

Slider টপ নিউজ


পাটনা-দিল্লি স্পাইসজেট ৭৩৭ বোয়িংয়ের পাইলট মনিকা খান্না এখন সংবাদের শিরোনামে। কেননা তার বুদ্ধিমত্তার জোরেই রক্ষা পেয়েছেন বিমানের ১৮৫ জন যাত্রী। গত রোববার পাটনা থেকে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মাঝ আকাশে বিমানের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। সে সময় মনিকার দক্ষতায় বিমানটি জরুরি অবতরণ করে পাটনা বিমানবন্দরে। ফলে প্রাণে বাঁচেন বিমানের সব যাত্রী।

রোববার কী হয়েছিল দিল্লিগামী স্পাইসজেটের বোয়িংটিতে?

আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, পটনা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল স্পাইসজেটের যাত্রিবাহী ওই বিমান। টেক অফের কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয়দের নজরে পড়ে, বিমানের ডানায় আগুন। সঙ্গে সঙ্গেই বিমানবন্দরে খবর দেওয়া হয়। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে জরুরি অবতরণের নির্দেশ দেওয়া হয় বিমানচালকদের।

কিন্তু পটনার বিমানবন্দর এমন জায়গায় যার রানওয়ের একদিকে গাছের লম্বা সারি, অন্যদিকে রেললাইন। এই পরিস্থিতিতেই জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান অবতরণ করানো খুব সহজ নয়। তার উপর এ রকম জরুরি অবস্থা। বিমানের যাত্রী এবং কর্মীরা বেঁচে ফিরতে পারবেন তো? না কি, মাঝ আকাশেই ইঞ্জিন থেকে পুরো বিমানে আগুন লেগে যাবে? চিন্তায় ছিলেন বিমানকর্মীরাও।

এই পরিস্থিতিতে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন স্পাইসজেট বোয়িং ৭৩৭-এর নারী পাইলট ক্যাপ্টেন মনিকা খান্না। বিমানটিকে পাটনা বিমানবন্দরে জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করানো হয়।

বিমানটি টেক অফের কিছু সময় পর ওই বিমানের ক্রুরা মনিকাকে জানান, পাখির ডানার ঝাপটা লেগে বিমানের একটি ইঞ্জিন থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে। এরপরই বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঝ আকাশেই সবক’টি ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন মনিকা। তার পর ধীরে ধীরে বিমানটি রানওয়েতে নামিয়ে আনেন। এফও (ফার্স্ট অফিসার) বলপ্রীত সিংহ ভাটিয়ার অবদানও অনস্বীকার্য। অবতরণের সময় মনিকাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্লেনের ইঞ্জিনে আগুন রানওয়ের কাছে আসার আগেই নিভে যায়। নিরাপদ অবতরণের পর এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা করতালি দিয়ে ক্যাপ্টেন মনিকাকে স্বাগত জানান।

তার সাহস ও ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন ডিজিসিএ-র কর্তাসহ বহু বিমানসংস্থার অভিজ্ঞ আধিকারিক। তাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে ‘ওভারওয়েট ল্যান্ডিং’ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে মনিকা তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।

কে এই ক্যাপ্টেন মনিকা খান্না?

স্পাইসজেট লিমিটেডের অভিজ্ঞ পাইলটদের মধ্যে অন্যতম মনিকা। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, মনিকা ২০১৮ সালে স্পাইসজেট বিমান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। চার বছরে প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসরণকারীর সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন মনিকা। নেপাল থেকে আর্মেনিয়া, মরিশাস-কর্মসূত্রে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।

এদিকে, পাইলট মনিকা খান্না ও ফার্স্ট অফিসার বলপ্রীত ভাটিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্পাইসজেটের ফ্লাইট অপরেশনের প্রধান গুরচরণ অরোরাও। তার কথায়, ‌‌‌‘অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা যেভাবে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তার জন্য আমরা গর্বিত।’

দিল্লিগামী স্পাইসজেটের বিমানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাটনার জেলাশাসক চন্দ্রশেখর সিং। তিনি বলেন, ‘বিমানটি নিরাপদের অবতরণের ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কী কারণ বিমানে আগুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’ সেইসঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গ্নিকাণ্ডের কারণ সন্ধানে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন বলেও জানান পাটনার জেলাশাসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *