ফাহিমা নূর, গাজীপুর: গাজীপুর সিটি মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে পদথেকে বহি:স্কারের পর জাহাঙ্গীর আলম সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকে বহিঃস্কারের জন্য শো’কজ নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে। এই তালিকায় বর্ষিয়ান নেতা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ১নং সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিমুদ্দিন বুদ্দিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়নও রয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও একাধিক সিটিকাউন্সিলরও।
এই প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেছেন, শো’কজ দেয়া শুরু হয়েছে। মোট সংখ্যাটা এখনো বলা যাবে না। দুই তিন দিন পর সঠিক সংখ্যা বলা যাবে।
গাজীপুর মহানগরের একাধিক নেতা বলেছেন, তারা শো’কজ নোটিশ পেয়েছেন। প্রত্যেকে শো’কজ নোটিশের একটি করে ফটোকপিও দিয়েছেন।
শো’কজন নোটিশ প্রাপ্তদের অনেকে জানান, দুই শতাধিক নেতাকে বহিঃস্কার করার জন্য শো’কজ নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনিও আছেন উল্লেখ করে বলেছেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এই শো’কজ নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ আছে।
যারা নোটিশ পেয়েছেন তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ মোকসেদ আলম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যান সম্পাদক এবং ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য ও সিটি কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য রজব আলী, হাজী আব্দুর রশিদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুন, দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট মনির হোসেন মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের ২৮নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব এডভোকেট জাকির হোসেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আক্কাছ আলী, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য এডভোকেট আব্দুর রহমান, শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর মোঃ আসকর আলী, সদস্য গিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ,
প্রমূখ।
এছাড়া শো’কজের তালিকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের আহবায়ক, সদস্য সচিব এবং সদস্যও রয়েছেন। তবে জাহাঙ্গীর আলমপন্থী হিসেবে সুপরিচিত অনেক নেতারা আবার শো’কজ নোটিশ পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, রাতারাতি গ্রুপ বদলের কারণে বহিঃস্কার থেকে তারা আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হতে পারেন।
২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহি:স্কার করে কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ। কয়েক দিন পর গাজীপুর সিটিমেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সরকার ও দল এই ব্যবস্থা গ্রহন করে। একই সাথে বিষয়গুলো তদন্তের জন্য সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়। মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন ও সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম চেয়ার ছাড়া হওয়ার পর জাহাঙ্গীরপন্থী অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়। গাজীপুর মহানগরের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাতবদল হয়। জাহাঙ্গীর আলমের ব্য্যক্তিগত স্টকে থাকা কয়েক লাখ ইটও লুট হয়।
এমতাবস্থায়, গাজীপুর সিটি নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগকে ঢেলে সাজানোর জন্য এই বহি:স্কার প্রক্রিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এখনো প্রমানিত হয়নি এবং তিনি নির্দোষ প্রমানিত হলে যে কোন মুহুর্তে ফিরতে পারেন, এই আশংকায় জাহাঙ্গীর আলম বিরোধী নেতারা তড়িঘড়ি করে বহিঃস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছেন।
এদিকে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বেশ কয়েকজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের জরিপও শুরু হয়ে গেছে। মাঠে ময়দানে সিটিমেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে যাদের প্রচারণা আছে তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মোঃ কামরুল আহসান সরকার রাসেল, সিটি কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম অন্যতম। তবে নির্দোষ প্রমানিত হয়ে সকল পদ ফিরে পেলে নৌকা প্রতীক চাইবেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু আগামী নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীর ইস্যু ফয়সালা না হলে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে ইতোমধ্যে তিনি ঘোষনাও দিয়েছেন।