গম রফতানি নিষিদ্ধ করার এক সপ্তাহের মাথায় চিনি রফতানিতেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। মূলত নিজস্ব খাদ্য সরবরাহের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ পদক্ষেপ নিতে চলেছে দেশটি। এতে খাদ্যমূল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।
ব্লুমবার্গের প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি ব্লুমবার্গকে জানান, ভারত সরকার সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিপণন বছরের জন্য ১০ মিলিয়ন টন চিনি রফতানি পরিকল্পনা করছে। আগামী অক্টোবরে চিনির মৌসুম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত চিনি মজুত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী দিনগুলোয় এ পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানান ওই ব্যক্তি।
গত বছর ব্রাজিলের পরে বিশ্বের বৃহত্তম চিনি রফতানিকারক দেশ ছিল ভারত। বাংলাদেশ দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশের পরে শীর্ষ গ্রাহকদের তালিকায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং দুবাই রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ভারতের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগা করা হলে তিনি ব্লুমবার্গের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
এ মাসের শুরুর দিকে তীব্র দাবদাহে ফসল নষ্ট হওয়ায় গমের রফতানি বন্ধ করে দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল ভারত। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যটির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাওয়া খাদ্যের দাম আরও বাড়িয়েছে। এরমধ্যে বিদেশে, বিশেষ করে এশিয়ায় সরকারগুলোর পণ্য বিক্রির নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপগুলো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় খাদ্যমূল্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের অন্যান্য সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে- ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রফতানি নিষেধাজ্ঞা এবং মালয়েশিয়ার বিদেশে মুরগি বিক্রি বন্ধ করে দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ প্রচুর থাকার সত্ত্বেও চিনির ওপর সর্বশেষ পদক্ষেপটি সতর্কতার একটি চরম ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
ভরতীয় সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ভারত এ মৌসুমে ৩৫ মিলিয়ন টন চিনি উৎপাদন এবং ২৭ মিলিয়ন টন খরচ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া গত মৌসুমের প্রায় ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন টন মজুতসহ ১৬ মিলিয়ন টনের উদ্বৃত্ত রয়েছে। যার মধ্যে ১০ মিলিয়নের মতো রফতানিযোগ্য চিনিও রয়েছে।
ভারত চিনির একটি প্রধান উৎপাদক এবং রফতানিকারক দেশ। সুতরাং দেশটির চিনি রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তি ব্লুমবার্গকে জানান, ৯ মিলিয়ন টন চিনির চালান সরবরাহ পূরণ হওয়ার পর রফতানিকারকদের বাকি এক মিলিয়ন টন চিনি চালান দিতে অনুমতির আবেদন করতে হবে।
একটি শিল্প গ্রুপ গত সপ্তাহে বলেছিল, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে কোম্পানিগুলো ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন চিনি জাহাজীকরণের চুক্তি করেছে। এর মধ্যে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত আনুমানিক ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন টন পাঠানো হয়েছে। মে মাসে আরও ৮ লাখ থেকে এক মিলিয়ন টন রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে।