ধরপাকড় থেকে বাঁচতে ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন খবর পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আটশোর বেশি এমন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। খবর ডয়চে ভেলে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এসব অভিযানে দেশটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ধরে নিয়ে জেল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে রোহিঙ্গারা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সে কারণে তারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। তাদের মতো অনেকে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভারত থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের চলে আসায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার (১৭ মে) তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসছেন। ওই রোহিঙ্গারা ২০১২ সালে ভারতে গিয়েছিল এবং সে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ছিল। এখন তারা শুনেছে যে বাংলাদেশে এলে তারা খুব ভাল খাওয়া-দাওয়া পাবে, তাই রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমরা ভারতকে বলব যে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সম্প্রতি ভারত থেকে আসা বেশ কিছু রোহিঙ্গা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ে যৌথ নিবন্ধন সাক্ষাৎকার গ্রহণের অনুমতি চেয়ে ক্যাম্প ইনচার্জকে লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
ইউএনএইচসিআর থেকে পাওয়া কার্ড দেখিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে আসা নুর আলম বলেন, ‘ভারতের জাম্বু থেকে কলকাতায় পৌঁছাই। সেখান থেকে বাংলাদেশের সিলেট হয়ে কক্সবাজারের এসেছি। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে দালালদের দিয়ে পাঁচদিনে এখানে পৌঁছেছি।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে জেলে দিচ্ছে। সেখানে ভালো করে থাকতে দিচ্ছে না। আমাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেই কারণে এখানে পালিয়ে এসেছি। গত তিন দিন ধরে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরছি। কিন্তু কোথাও আশ্রয় পাচ্ছি না।’
নুর আলম আরও বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন ট্রানজিট পয়েন্ট পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের ঢোকাচ্ছে না। আমি ভারতে দিন মজুরি করে জীবনযাপন করছিলাম।’
তার সঙ্গে আরো ত্রিশ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি। এর আগে ২০১২ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন নুর আলম। পরে পরিবার নিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু সেখানেও টিকতে পারলেন না।
রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসে কলকাতায় জড়ো হন। এরপর সেখান থেকে দালালদের মাধ্যমে সীমান্তের সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। এরপর টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি দালালেরা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে পৌঁছে দেয়। অনেকক্ষেত্রে তারা প্রতারণার শিকারও হচ্ছেন৷
পুলিশের ভাষ্যমতে, গত দেড়মাসে ভারত থেকে পালিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ৮০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়শো জনকে ক্যাম্পে একটি সেন্টারে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়া ট্রানজিট পয়েন্টে প্রায় দুশো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভারতসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসাদের প্রথমে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। কোয়ারেন্টিন শেষে আবার উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে সেখানকার প্রক্রিয়া শেষে ক্যাম্পে পাঠানো হয়। আমার অধীনে এ পর্যন্ত ১২৪ জন রোহিঙ্গাকে এই প্রক্রিয়ায় ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।”