ভেতরে ভেতরে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত: ঢাকার উত্তরে মিন্টু, দক্ষিণে আব্বাস ও চট্টগ্রামে আমীর খসরু
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির চিন্তা এখন পর্যন্ত ইতিবাচক। দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরাও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনটি মৌলিক প্রশ্নে দ্বিধায় আছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, তিন সিটি নির্বাচন সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং নীতিনির্ধারকেরা তিনটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত। এক. সংসদ নির্বাচনের জন্য টানা কর্মসূচি চালিয়ে হঠাৎ সিটি নির্বাচনে গেলে চলমান আন্দোলনের পরিণতি কী হবে। দুই. নির্বাচনে গেলে দল-সমর্থিত মেয়র, বিশেষ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নির্বিঘ্নে গণসংযোগ চালাতে পারবেন কি না। তিন. এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জিতলেও আদতে কোনো লাভ হবে কি না।
তবে বিএনপিতে এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ভেতরে ভেতরে তিন সিটির মেয়র পদপ্রার্থীর নাম অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামে বিএনপির চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা উত্তরে আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও দক্ষিণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তবে মির্জা আব্বাসের ব্যাপারে কিছু সংশয় থাকায় আরেকজনকে বিকল্প খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা বুলুকে প্রার্থী হিসেবে চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দুজন ওই এলাকার ভোটার না হওয়ায় সে চিন্তা বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য প্রার্থীদের পুরো বিষয়টি এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মূলত সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ঘিরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা দুশ্চিন্তা বেশি। কারণ হিসেবে দলটির নেতারা মনে করছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেককে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আবার সম্ভাব্য অধিকাংশ প্রার্থীর নামে মামলা থাকায় তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় যোগ্য ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন কি না, অথবা প্রার্থী হলে নির্বিঘ্নে ভোট চাইতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এর সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়-ও, তাহলে প্রার্থীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও আছে। কারণ, প্রার্থী হতে পারেন এমন অনেকে এবং প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন এমন আরও অনেকে জেলে আছেন। অনেকে মামলার কারণে বের হতে পারছেন না। তাহলে আমরা নির্বাচন করব কীভাবে?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন দেখতে হবে নির্বাচন কমিশন কী করেন। সরকারের লোকেরা মাঠে দাপিয়ে বেড়াবে, আর আমরা পালিয়ে বেড়াব, তাহলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।’
বর্তমান সরকারের অধীনে এর আগেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। দলটির নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কাজ করতে পারেননি। পাঁচ মেয়রের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে সরকার মামলা দিয়েছে। এঁদের দুজন এখন কারাবন্দী। একজন গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গতকাল বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও নজরুল ইসলাম খান বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রকে বদলে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, না হয় তাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। যাতে করে তাঁরা কাজ করতে না পারেন। তাঁদের বহিষ্কার করে সরকারি দলের লোকদের সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
সিটি নির্বাচনে গেলে চলমান অবরোধ-হরতালের কী হবে—এ নিয়ে নানান কথা রয়েছে দলের ভেতর-বাইরে। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যখন নির্বাচনে যাব তখন এই প্রশ্ন আসবে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়ার বিষয়ে বিএনপিতে দুই রকম মত আছে। তবে নির্বাচনের পক্ষের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্য হলেও নির্বাচনবিরোধীরা এখনো দৃশ্যমান নন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে নানা মাধ্যমে কথা চালাচালি হচ্ছে।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা ঠিক, কিছুসংখ্যক লোকের আগ্রহ আছে। আবার কিছু লোকের আপত্তিও আছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করে লাভ কী? তো এ ব্যাপারে কথাবার্তা যে হচ্ছে না, তা না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করছি, শিগগিরই হয়তো সিদ্ধান্ত হবে।’