নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: বেরিয়ে এল নেপথ্যের কারণ

Slider জাতীয়


রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের নেপথ্যের কারণ বের হয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা খেয়ে বিল কম দিয়েছে- ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের সতত্যা মেলেনি। উল্টো দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের নিজেদের বিতণ্ডায় শিক্ষার্থীদের ডেকে
সোমবার (১৮ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। বন্ধ রয়েছে নিউমার্কেট এলাকার সব দোকান।

সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিউমার্কেটের-৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই ‘ওয়েলকাম’ ও ‘ক্যাপিটাল’ নামের দুটি ফাস্টফুডের দোকান। ইফতারের সময় হাঁটার রাস্তায় টেবিল বসিয়ে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে বসাকে কেন্দ্র করে ওই দুই দোকানের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী। এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০-১২ জন যুবক আসে নিউমার্কেটে। এ সময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসে। তারা ক্যাপিটাল দোকানে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ায়। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালায়।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১১টা ৩ মিনিটে ৪ নম্বর গেট দিয়ে রামদা হাতে সাদা টি-শার্ট পরা এক তরুণের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল মার্কেটে প্রবেশ করে। এরপর তারা ওয়েলকাম ফাস্টফুডে ঢুকে সেখান থেকে বেরিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের দিকে যায়। সেখানে দোকানের বাইরেই ঝামেলা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর মার খেয়ে পালিয়ে যায় বহিরাগত তরুণরা। তারা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি ক্যাপিটাল দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিপদ আঁচ করতে পেরে সে সময় মার্কেটের ৪ নম্বর গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে হেলমেটধারী কলেজ ছাত্ররা এসে ৪ নম্বর গেট ভাঙতে শুরু করে। রাত ১২টার দিকে ছাত্ররা ২ নম্বর গেট খুলে মার্কেটে ঢুকে কিছুক্ষণ ভাঙচুর করে আবার বেরিয়ে যায়। এ সময় তাদের দুটি দোকান ভাঙচুর করতে দেখা যায়। তখন থেকে ব্যবসায়ীসহ হকাররা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের জেরে ঢাকা কলেজের সব আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) থেকে আগামী ৫ মে পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে আজ বিকেলের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন তারা। বিকেল সোয়া ৪টায় ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে সম্মিলিতভাবে ছাত্রনেতারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।

হল ও ক্যাম্পাস না ছাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফুয়াদ হাসান বলেন, প্রয়োজনে আমরা লাশ হয়ে বের হব। তবু হল-ক্যাম্পাস ছাড়ব না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে বলেছি সুন্দর সমাধান করতে। তিনি যদি তা না পারেন তবে তার পদত্যাগ দাবি করছি।

এ সময় শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণসহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। এর আগে আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ থামে। পরে আজ সকালে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত মিরপুর সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। এ ছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সময় টিভির প্রতিবেদকসহ ৬ সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন ব্যবসায়ীরা। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে অন্তত তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *