পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর অতীত যেমন ছিল

Slider বিচিত্র


পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাস আরো একবার বাঁক বদল করেছে। এক সফল অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা পিএমএল-এন’য়ের প্রধান শাহবাজ শরিফ এখন পার্লামেন্ট নেতা এবং নয়া প্রধানমন্ত্রী।

মনে রাখা প্রয়োজন, শাহবাজ শরিফ যদিও গত সাড়ে তিন বছর ধরে বিরোধী দলের নেতা, তারপরও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাকে একজন নবাগত হিসেবেই মনে করা হয়।

পাঞ্জাব প্রদেশের স্থানীয় রাজনীতির একজন নেতা হিসেবেই তার পরিচয় বেশি উজ্জ্বল। তিন মেয়াদে ১৩ বছর ধরে প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শরিফ। ওই তের বছরে অনেকবারই আবেগপ্রবণ আচরণ ও ভিন্ন ধারার কাজের কারণে তিনি মিডিয়া ও বিরোধীদের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন।

কখনো তাকে দেখা গেছে নৌকায় চড়ে বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে যেতে। কখনোবা তার সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চালিয়েছে ‘আকস্মিক অভিযান’। এসব ঘটনায় বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া হতো- ‘এ সবই লোক দেখানো কাজ, নইলে মিডিয়া কেন তার সাথে থাকবে’?

যাইহোক সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের যারা তাকে চেনেন, তারা মনে করেন তিনি একজন ‘পরিশ্রমী নেতা’।পাঞ্জাবে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প তিনি নিয়েছেন। তাকে ওই প্রদেশে দেখা হয় একজন ‘কঠোর প্রশাসক’ হিসেবে।

তিনি কীভাবে বিখ্যাত হয়ে উঠলেন? মুখ্যমন্ত্রী থেকে কী করে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছালেন?
ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ, লেখাপড়া শেষে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের এই ছোট ভাই। লাহোরের একজন সিনিয়র সাংবাদিক সালমান গনি বহু দিন ধরে শরিফ পরিবার ও তাদের দল নিয়ে রিপোর্টিং করছেন। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট হন শাহবাজ শরিফ।

গনির বক্তব্য, শাহবাজ শরিফ তার ভাই নওয়াজ শরিফ এবং দলের রাজনীতির প্রচারে কাজ করেছেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। প্রথম থেকেই তার পরিবারের কাছে নিজেকে পরিশ্রমী এবং দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। ব্যবসায় সাফল্যের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার মনস্থ করেন।

১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জিতে তিনি প্রথমবারের মতো পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির একজন সদস্য হন। ১৯৯০ ও ১৯৯৩ সালেও তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালেই প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন শরিফ।

‘তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেই ভাল করতেন’
পরের সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এন জেতার পর ১৯৯৭ সালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ। ওই সময়ের রাজনীতির সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল একজন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মুজিব-উর-রহমান শামি। তিনি বলেন, ‘তিনি (শাহবাজ শরিফ) পাঞ্জাবে একটি ভালো টিম গঠন করেছিলেন’।

শরিফ বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলেন পাঞ্জাবে, কিন্তু তার সরকারের অকাল-পতন ঘটে যখন ১৯৯৯ সালে সামরিক আইন জারি করে জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফকে গ্রেফতার করেন।

ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহে শাহবাজ শরিফের কোনো হাত ছিল না, বলছেন সাংবাদিক মুজিব-উর-রহমান শামি। ‘তার সবসময়ের দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল সামরিক প্রতিষ্ঠানসহ সকলেরই একযোগে কাজ করা উচিৎ’।

মুজিব-উর-রহমান শামি বলছেন, ‘কোন এক জায়গায় পারভেজ মুশাররফ একবার এও বলেছিলেন যে, তিনি (শাহবাজ শরিফ) প্রধানমন্ত্রী হলেই ভালো করতেন’।

প্রদেশ থেকে কেন্দ্রে
রাজনীতিতে সবসময়ই বড় ভাই নওয়াজ শরিফের ছায়াতলে দ্বিতীয় সারির ভূমিকায় থেকেছেন শাহবাজ শরিফ। বড় ভাই যখনই প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ হন প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী।

মুজিব-উর-রহমান শামির বর্ণনায়, শাহবাজ শরিফ গণমানুষের নেতা ছিলেন না, বরং তিনি একজন ভালো প্রশাসক ছিলেন, যিনি সামরিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্বে জড়ানোর পক্ষপাতী নন।

যাইহোক, পরিস্থিতি বদলে যায় ২০১৭ সালে, যখন পানামা পেপার্স ফাঁসের জের ধরে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে আজীবনের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হবার অযোগ্য ঘোষণা করেন। এরপর শাহবাজ শরিফ দলীয় প্রধানের পদ পান ঠিকই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হন শহিদ খাকান আব্বাসি।

ওদিকে কিছু দিন জেল খাটার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান নওয়াজ শরিফ। তারপর আর কখনো দেশে ফেরেননি তিনি। এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঞ্জাব থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রের রাজনীতিতে যোগ দিতে মনস্থ করেন শাহবাজ শরিফ। তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলের প্রধান হিসেবে বিরোধী দলের নেতা হন।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মামলা তার বিরুদ্ধেও হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হননি তিনি। সর্বসম্প্রতি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে লাগেন শাহবাজ শরিফ, যার অংশ হিসেবে জাতীয় পরিষদে খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন।

সাংবাদিক সালমান গনি বিশ্বাস করেন, কেন্দ্রের রাজনীতি ঠিক পাঞ্জাবের মতো নয় এবং এখানে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা শাহবাজ শরিফের জন্য ততটা সহজ হবে না।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *