রমজান মাসের সব আমল বহুগুণে বর্ধিত হয়। প্রতি ওয়াক্তের নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, সুন্নত ও নফল নামাজ সবকিছুই আলাদা গুরুত্বসহকারে আদায় করা হয়। আর রমজান মাসের জুমাবার মুসলমানদের জন্য আরো বেশি গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এই দিনকে আমল করার জন্য আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
জুমার নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। জুমু’আহ শব্দটি আরবি। এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। জুমা মুসলমানদের একটি সামাজিক ইবাদত।
যেহেতু শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে সেদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’ বলা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিন বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা এ দিনকে অন্যান্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পবিত্র রমজানের জুমার দিন হওয়ায় এর ফজিলত ও গুরুত্ব আরো অনেকগুণ বেশি। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ।’ (সূরা: আল জুমুআ, আয়াত: ৯)
পবিত্র কুরআনের এই যে নির্দেশনা, জুমার আজান হওয়ার সাথে সাথেই সব কিছু ফেলে মসজিদে যাওয়া, তার প্রশিক্ষণ আজকের এই জুমা থেকেই শুরু হোক।
হাদীসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইউসুফ রা: ও আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মতো গোসল করে সালাতের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন এক শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানী করল।
পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। তাই জুমার দিন মসজিদে কেবল নামাজ পড়তেই না বরং জুমার বয়ান শোনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জুমার বয়ান শোনার প্রতি এই মনোযোগের ধারা আজকে থেকেই শুরু হোক।
জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ)
এছাড়াও হাদীস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমা তোমাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাত ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমার আগের রাত্রিটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পরের রাতে বনি আদমের সমস্ত আমল মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। (বুখারি)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরের জুমা, এক রমজান থেকে পরের রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম; ২৩৩)।
জুমার এইসব ফজিলত চিরন্তন। রমজান মাসে এই ফজিলত আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই পবিত্র রমজান মাসের এই প্রথম জুমাকে আমরা আমাদের ইবাদাতের উপলক্ষ বানিয়ে নিতে পারি। আমলের একটি মাইলফলক বানাতে পারি। আজকে যে দোয়া কবুলের মুহূর্ত আছে সেটাকে কাজে লাগাতে আছরের পরের পুরো সময় আমরা ইবাদতে মশগুল থাকতে পারি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আজকের এই বরকতময় দিনকে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন।