মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন কারাবন্দীর আনা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।
একইসাথে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কনডেম সেলে থাকা আসামিদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসাথে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে।
শিশির মনির বলেন, ‘সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন না মঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দী রাখা হয়।’
অ্যাডভোকেট শিশির মনির আরো বলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। তারা হলেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে আইনজীবী শিশির মনির কনডেম সেলের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে কারা অধিদফতরে চিঠি দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর এ আইনজীবীর চাহিদা অনুসারে তথ্য দেয় কারা অধিদফতর। যেখানে বলা হয়েছে, দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য কনডেম সেল রয়েছে মোট ২ হাজার ৫৯৯টি। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদির জন্য ২ হাজার ৪৫৬টি এবং নারীদের জন্য রয়েছে ১৪৩টি সেল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব সেলে মোট কয়েদি ছিলেন ১ হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদি ছিলেন ১ হাজার ৯৩৩ জন। আর নারী কয়েদি ৫৪ জন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সেলের সংখ্যা অপ্রতুল হলে একাধিক কয়েদিকে একসাথে রাখা হয়। তবে সাধারণত একটি কনডেম সেলে একজনকে রাখা হয়। কয়েদিদের বিনোদন ও খেলাধুলার বিষয়ে বলা হয়, কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের চিত্তবিনোদনের জন্য বই-পুস্তক ও পত্রপত্রিকা পড়ার এবং শরীর চর্চার সুযোগ দেয়া হয়।
শিশির মনির জানান, গত ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ডেথ রেফারেন্স জটে বছরের পর বছর কনডেম সেলে আসামিরা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগে চলতি বছরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে। অর্থাৎ, ২০২১ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে ২০২৬ সালে।
সূত্র : বাসস