টিপু হত্যা: ‘শুটার’ মাসুম রিমান্ডে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না

Slider বাংলার আদালত


মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। কাটআউট (তৃতীয় পক্ষ) পদ্ধতিতে খুন হওয়া টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী কে এবং কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শুটার মাসুম ওরফে আকাশকে নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ঘটনায় সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুটার আকাশ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কি-না তা জানার জন্য তাকে মোটরসাইকেলে করে বহনকারীকে অন্য কিলার এবং ব্যাকঅ্যাপ টিমে যারা ছিল তাদের গ্রেপ্তার না করতে পারলে তা স্পষ্ট হওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি ডিবি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আবার নতুন মোটিভ পেয়েছে গোয়েন্দারা। মতিঝিলে ২০১৬ সালে বোঁচা বাবুর হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বোঁচা বাবুকে হত্যার পেছনে নিহত টিপুর হাত ছিল বলে সে সময় গুঞ্জন ছিল। সেই খুনের বদলা নিতে টিপুকে হত্যা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। টিপুর গাড়িতে থাকা কালামসহ আরও দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি পুলিশ।

এছাড়াও আন্ডারওয়ার্ল্ড এর শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান ও মানিকের লোকজনের সঙ্গে মতিঝিলের আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতাকর্মীর যোগাযোগ আগে ছিল তার আবার নতুন তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দারা। ডিবি’র ধারণা, জিসান ও মানিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ওই গ্রুপটিই পরিকল্পনা করে টিপুকে হত্যা করেছে। এটা খুনের বড় মোটিভ হিসেবে দেখছে ডিবি। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যাকঅ্যাপ টিমে কে ছিল তাদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি ডিবি। এজন্য সিসিটিভি’র ফুটেজ ও প্রথাগত সোর্স দিয়ে তাদের চিহ্নিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মতিঝিলের যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক নেতা ফেঁসে যেতে পারেন। অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন।

এদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া কিলার মো. মাসুম ওরফে আকাশকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আকাশকে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার সড়কে এক অজ্ঞাত আততায়ী গুলিতে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কিলিং মিশন সেরে গেঞ্জি ও সাদা পায়জামা পরা হেলমেটধারী আততায়ী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি নিফাত রহমান শামীম গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা আছে তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে কাজ করছি।’
মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টিপু হত্যার মূল মোটিভ হিসেবে মতিঝিলের বোঁচা বাবুর যোগসূত্র পেয়েছে ডিবি। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতেই টিপুকে হত্যা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, শুটার আকাশকে নিয়ে তাদের ধোঁয়াশা কিছুটা এখনও আছে। তবে টিপুর গাড়িতে যারা ছিল তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতে টিপু হত্যাকাণ্ডের মূল শুটারের বিষয়ে তারা একটি ধারণা পেয়েছেন।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ড প্রায় ২ মাস আগে করা হয় বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। বৈঠকটি হয়েছিল ফকিরাপুলের ব্যাংক পাড়ায়। এতে মতিঝিল এলাকার দুই যুবলীগের নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তদন্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *