নাবিক আরিফের বরগুনার বাড়িতে চলছে মাতম

Slider বরিশাল


বরগুনা: ইউক্রেনের অলিভিয়া পোর্টে রাশিয়ার রকেট হামলায় বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’-এর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুতে তার বরগুনার বেতাগীর গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। আহাজারি করছেন স্বজনরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান আরিফকে হারিয়ে বাবা বাকরুদ্ধ ও মা বেহুঁশ। গত বুধবার (২ মার্চ) রাত ১১টার দিকে আরিফের নিহত হওয়ার খবর পান স্বজনরা।

নিহত আরিফের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ৩ নং হোসনাবাদ ইউনিয়নে। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
হাদিসুরের চাচা ও বেতাগীর উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান জানান, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে খবরটি পেয়েছেন তারা। পরে হাদিসুরের পরিবারকে তা জানানো হয়।

তিনি আরো বলেন, কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইনের মাধ্যমে জানতে পারি বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হয়েছেন।
এ খবরে হাদিসুরের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। এই অবস্থায় তার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামে জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়।
দুই দিন পর ২৩শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছায় এটি। এ সময়ে ইউক্রেন পরিস্থিতির অবনতি হলে শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই জাহাজটিকে অবস্থান করতে বলা হয়। ২৮শে ফেব্রুয়ারি শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান জানান, ইউক্রেন জলসীমায় অবস্থান করলেও, ওই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আসতে পারছে না। জাহাজটিতে ২৯ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন।

ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন হাদিস। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া আরিফ চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন, লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।

হাদিসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাকরুদ্ধ বাবা মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পড়ার পর থেকেই তাদের পরিবারের সকলের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সন্তানের লাশ ফেরা নিয়ে এখন আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছিলেন আরিফ। ইউক্রেনের সময় বুধবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাদের জাহাজে হামলা হয়েছে। জাহাজে আরিফসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন।

নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।
তারেক আরও বলেন, তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এক নজরের জন্য হলেও আমার ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেলো। এমনটা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুতে বরগুনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে বেতাগী উপজেলা ভূমি অফিসার ফারহানা ইয়াসমিন পরিবারটির সাথে দেখা করে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *