করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেবে কমানোর পথ নেই—ড. বিজন কুমার শীল

Slider টপ নিউজ

আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অণুজীব বিজ্ঞানী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল। মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. বিজন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছি কীভাবে জ্যামিতিক হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। নিস্বন্দেহে দেশে সংক্রমণটা বাড়বে। এটা কমানোর কোনো পথ নেই। গত দশদিনে আমাদের দেশে সংক্রমণের হার ১ থেকে ১০ শতাংশে বেড়েছে। এমনভাবে ভাইরাসটি আমাদের এখানে ছড়িয়ে পড়েছে যা নিয়ন্ত্রণে আনা খুব কঠিন। ইতিমধ্যে ইউরোপীয়ানরা বলছে, ভাইরাসটিকে যেন আমরা আলিঙ্গন করি। যেহেতু আমাদের আর বিকল্প পথ নেই।
এটা আসবেই। সুতরাং এটাকে মেনে নেয়াই ভালো। তবে যত কম সংক্রমিত হয় তত ভালো।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, মৃত্যুহার এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা যেহেতু সারা পৃথিবীতেই কম হচ্ছে এ জন্য এই নতুন ভাইরাসটি ‘ভারে কাটছে’ কিন্তু ‘ধারে কাটতে’ পারেনি। অর্থাৎ এটা মানুষের ফুসফুসকে বেশি আক্রান্ত করতে পারছে না। অন্যদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মানুষের মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি দুটোই বাড়িয়েছে। সে হিসেবে বলা যায়, ইনফেক্‌শন তো হবেই। তারপরে আমাদের এন্টিবডিটা যদি ভালো আসে এবং হাসপাতালে যাওয়া না লাগে তাহলে এটা অনেকটাই আমাদের সবার জন্য সুখবর। কিন্তু সাবধানতার মার নেই।

বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। ভারতীয় চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে বলছেন, এটা হামের চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট একজন থেকে আটজনকে আক্রান্ত করতে পারে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ৫-৬ জনকে সংক্রমিত করতো। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এটি মিজলসের মতো এত বড়। তবে মাঝামাঝি ধরলে এ রকম হবে। সে হিসেবে এই ভাইরাসটি যেভাবে ছড়াচ্ছে শীতের সময় এটি বাতাসের মাধ্যমে বিশেষ করে এয়ার কন্ডিশনে এটা বেশি ছড়াতে পারে। তাছাড়া এই শীতের সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থাকছে। এতে করে সংক্রমণটা আরও দ্রুত ছড়ায়। এই ভাইরাসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে আঘাত করছে। এটা এই ভাইরাসের মারাত্মক একটি ক্যারেক্টার। এজন্য এর বিস্তারটা খুব দ্রুত হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে শুধু আমাদের দেশেই নয় সমগ্র পৃথিবীতে একটি বিশাল অংশের মানুষ আক্রান্ত হয়ে যাবে। এই অণুজীব বিজ্ঞানী আরও বলেন, এপ্রিল মাসের পর থেকে সংক্রমণ কমতে থাকবে। আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তাহলে সেপ্টেম্বরের দিক থেকে আমরা মোটামুটি এই পেন্ডেমিক থেকে এন্ডেমিকে (স্থানীয় পরিসরে) নেমে যাবো। তখন পেন্ডেমিক আর থাকবে না। এর ব্যাখাটি হচ্ছে, গত দুই বছরে কিন্তু বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট এসে আমাদের মধ্যে যে এন্টিবডি তৈরি করেছে সেটা যথেষ্ট শক্ত অন্য যেকোনো ভ্যারিয়েন্টকে রোধ করার জন্য। ড. বিজন আরও বলেন, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টাডি যেটা শোনা গেছে, আফ্রিকান গবেষকরা বলছেন যারা ওমিক্রন থেকে সেরে উঠছেন তাদের রক্তে যে এন্টিবডি আছে সেটা ডেল্টাকেও ইউটিলাইজ করতে পারে। যেখানে ডেল্টা সবচেয়ে মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট। গবেষকদের এই গবেষণা যদি সত্যি হয় তাহলে পরবর্তী যে ভ্যারিয়েন্টগুলোই আসুক সেটা কিন্তু এই এন্টিবডিকে খুব বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। ওমিক্রন মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে ড. বিজন বলেন, এখন আমি যেটা মনে করি নিয়মিত মাস্কপরাটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। একাধিক লেয়ারের তৈরি সুতি কাপড়ের মাস্ক এক্ষেত্রে অনেক ভালো এবং সাশ্রয়ী। যেটা এক থেকে দু’দিন অন্তর ধুয়ে পুনরায় পরা যাবে। এটাকে কোনোভাবে বাদ দেয়া যাবে না। তবে দূরত্ব বজায় রাখা খুব কঠিন। কারণ, আমরা যতই বলি না কেন মানুষ দূরত্ব বজায় রাখবে না। শীতে হাত বেশি ধুতে না চাইলে বাজারে যে এলকোহলের স্প্রেগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া সরকার মাস্ক পরতে উৎসাহী এবং বিধিনিষেধ আরোপ করেছে একটি ভালো পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন এই অণুজীব বিজ্ঞানী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *