রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিন যুবক। ওই ঘটনায় হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
যখন ওই নারীকে ছুরির ভয় দেখিয়ে টেনে সিএনজিতে তোলা হয় তখন তিনি চিৎকার করেন। আশপাশে লোকজনও ছিল। সেই অবস্থায় মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তিন যুবক। এগিয়ে আসেনি কেউ।
প্রকাশ্যে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকায় এমন ঘটনায় ক্ষোভ আর নিন্দায় সোশ্যাল মিডিয়া ফুঁসে উঠেছে। অনেকের বক্তব্য এক বিন্দুতে এসে ঠেকছে আর তা হলো- ‘দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা অনিরাপদ কেন? কক্সবাজারের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন কেন?’
শুধু তাই নয়, এমন ঘটনা নাকি কক্সবাজারে প্রায়ই ঘটছে। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘কক্সবাজারে এগুলো কমন জিনিস। মেয়েটা মিডিয়ায় জানিয়েছে বলে আজকে এগুলো সবাই জানে। কিন্তু এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে। আমার সামনে বাচ্চা একটা মেয়ের বুকে কয়েকটা ছেলে হাত দিয়েছিল। অথচ মেয়েটার সামনে তার বাবা-মা ছিল। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে পুরো কক্সবাজারবাসী আমার ওপর চড়াও হয়েছে।’
চট্টগ্রামে বসবাসকারী একজন নারী ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যেই হোটেলে তাদের চেক ইন ছিল, তাদেরও আওতায় আনা দরকার। ইনফরমেশন সেখান থেকেই গেছে। ধাক্কার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নাটক। আর কক্সবাজার এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য। এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটছে সেখানে। লাইমলাইটের আড়ালে থাকে বলে উঠে আসছে না।’
একজন লিখেছেন, ‘দেশটা ধর্ষকের স্বর্গরাজ্য হয়ে গেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এভাবেই দেশকে গ্রাস করে ফেলে। ইয়াবা সম্রাট বদিরা যখন আমাদের আইনপ্রণেতা হন, তখন দেশের কাছে আমাদের আর কী-ই বা চাইবার আছে!’
অধিকাংশ নেটিজেনই মন্তব্য করছেন, ‘কোন দেশে আছি।’ অনেকেই বলছেন, ‘পর্যটন এলাকায় যদি ভালো নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকে তাহলে মানুষ যাবে না। পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’
গণমাধ্যমের ‘সংবাদ’ লিংক নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেট নাগরিকরা।
একজন লিখেছেন, ‘গায়ে ধাক্কা দিয়ে ঝগড়া, তারপর ছিনতাই- এটা বহু বছর ধরে চলছে। এটা এখন ধর্ষণ পর্যন্ত চলে গেছে। এভাবে চলার চেয়ে বন্ধ করে দেউলিয়া হোক পর্যটনশিল্প।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘কক্সবাজার একটা ডাকাতির বাজার, মানুষ দেশের বাইরে যাবে না তো কী করবে। এ দেশের পর্যটন সুবিধা বস্তির মানের।’
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাইছে। কারণ আমার স্বামী অতটা চালাক-চতুর না, সরল-সোজা মানুষ। আমার স্বামী কইছে, ভাই আমরা অন্য জায়গা থেইকা আইছি আমারে মাফ কইরা দেন। তার ৫ মিনিট পর একটি সিএনজি নিয়া আইসা তারা আমারে টাইনা উঠায়ে ফেলাইছে। তখন বাস থিকা অনেকগুলা লোক নামছে। দুইবার চিৎকার করছি। করার সময় একজন মুখ ধরছে, আরেকজন হাত ধরছে, তারপরে মুখ বাইন্ধা ফেলছে। তারপর ভাঙ্গচোরা রাস্তা দিয়া চিপাচাপার মধ্যে নিয়া গিয়ে তিনজন আমারে রেপ করছে।’
এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।
ওই নারী আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দেয়। পরে তাদের র্যাব উদ্ধার করে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু ঘটনাটি স্পর্শকাতর তাই র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।’
বুধবার দিনগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান র্যাব-১৫-এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ওই নারীর বরাত দিয়ে বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন তারা (ওই নারী পর্যটক)। তারা শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে রুম নিয়ে ওঠেন।
ওই হোটেল থেকে তারা বিকেলে যান লাবনী পয়েন্টের সৈকতে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, ‘এ ঘটনা শুনে পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠে নেমেছে পুলিশের একটি দল। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।