ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিতে ফের উদগীরণ, মৃত্যু বেড়ে ২২

সারাবিশ্ব

ইন্দোনেশিয়ার সেমেরু আগ্নেয়গিরি ফের সক্রিয়া হয়ে উত্তপ্ত ছাই উদগীরণ করেছে আর দুই দিন আগের ব্যাপক উদগীরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে এবং বহু লোক নিখোঁজ রয়েছেন।

জাভা দ্বীপের সর্বোচ্চ এই আগ্নেয় পর্বতটি থেকে শনিবার উত্তপ্ত ঘন ছাই ও ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডুলি উৎক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের গ্রামগুলো ঢেকে দেয়।

উপর থেকে নেওয়া ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্তৃত এলাকা ঘন ছাইয়ে ঢাকা পড়ে আছে আর তার মধ্যেই ভবনগুলো মাথা বের করে আছে। নিচের গ্রামগুলোতে সামরিক কর্মকর্তারা, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা হাত দিয়ে ছাই, কাদা সরিয়ে আটকা পরা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

সোমবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে, আরও ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি এবং ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি প্রশমন কেন্দ্র তাদের টুইটার একাউন্টে সোমবারের উদগীরণের কথা নিশ্চিত করেছে। আগ্নেয়গিরিটির সক্রিয়তা অব্যাহত আছে বলে সতর্ক করেছে তারা।

সেমেরু আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণাগারের প্রধান লিসওয়ান্তো রয়টার্সকে বলেন, “ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে সেমেরু একটি। ৪ ডিসেম্বরের উদগীরণের আগেও এটি সক্রিয় ছিল, পরেও এর সক্রিয়তা বজায় আছে এবং থাকবে।”

উদ্বিগ্ন কিছু বাসিন্দা তাদের জিনিসপত্র ও গবাদিপশু ঠিক আছে কিনা দেখতে বাড়িতে ফিরেছেন, কিন্তু লিসওয়ান্তো লোকজনকে পর্বতটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “মাউন্ট সেমেরুর সম্ভাব্য হুমকি এখনও বজায় আছে, তাই লোকজনের আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।”

সুম্বুলউলু এলাকায় খারাপ আবহাওয়ার কারণে ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহতদের বের করে আনতে উদ্ধারকারী দলগুলোকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

“প্রধান অন্তরায় আবহওয়া। সামনে আবহাওয়া ভালো হয়ে ওঠার সম্ভাবনায় আশাবাদি আমরা, এতে তল্লাশি চালানো সহজ হয়ে উঠবে,” এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন দেশটির জাতীয় তল্লাশি ও উদ্ধার সংস্থার (বাসারনাস) অভিযান বিষয়ক পরিচালক উরিয়ান্তো।

লোকজন ফেইসবুকে তাদের নিখোঁজ প্রিয়জনদের ছবি শেয়ার করে তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে জানানোর আবেদন জানিয়েছেন।

উদগীরণে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, এদের অধিকাংশই দগ্ধ হয়েছেন। নেমে আসা লাভার প্রবাহে শনিবার লুমাজাং জেলার দুটি এলাকার সঙ্গে মালাং শহরকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।

বাস্তুচ্যুত ১৭০০ জনেরও বেশি মানুষের জন্য লঙ্গরখানা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকার উদ্দেশ্যে চাল, কম্বল, কাপড়চোপড় ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ত্রাণ প্যাকেজ পাঠানো হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১৩০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে সেমেরু একটি। জাভা দ্বীপে ৩৬০০ মিটার উঁচু এ আগ্নেয়গিরি থেকে গত জানুয়ারিতেও উদগীরণ হয়েছিল, তবে তখন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

‘প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার’ বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার ওপর ছড়িয়ে থাকা বহু দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়া অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। কয়েকটি টেকটনিক প্লেটের প্রান্তসীমা রয়েছে এই এলাকায়, ফলে এখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয় এবং একই কারণে সেখানে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *