জামিন পেলেন ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর সংগ্রহকারী ২ সাংবাদিক

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর সংগ্রহ করার জেরে গ্রেফতার হওয়া দুই নারী সাংবাদিক জামিন পেয়েছেন।

সোমবার ত্রিপুরার গোমতি জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গ্রেফতার দুই সাংবাদিক সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝাকে জামিন দেন।

এর আগে রোববার মুম্বাইভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এইচডব্লিউ নিউজের এই দুই প্রতিবেদককে ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে আসাম পুলিশ। পরে তাদেরকে ত্রিপুরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

এইচডব্লিউ নিউজের ম্যানেজিং এডিটর সুজিত নায়ার এক টুইট বার্তায় এই দুই সাংবাদিকের মুক্তি পাওয়ার খবর জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী ও সমর্থন করা সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

রোববার সকালে জনৈক কাঞ্চন দাসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন (এফআইআর) দাখিল করে ত্রিপুরা পুলিশ।

অভিযোগে বলা হয়, ওই দুই সাংবাদিক রাজ্যের উনকোটি জেলার পাল বাজারে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাতকালে হিন্দু সম্প্রদায় ও ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে ‘উত্তেজক বক্তব্য’ দিয়েছেন।

এর আগে অবশ্য এই দুই সাংবাদিক জানিয়েছিলেন, তারা গত মাসে ত্রিপুরায় উনকোটির পাল বাজারে হিন্দুত্ববাদী এক সংগঠনের সমাবেশ চলার সময় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মসজিদ লক্ষ্য করে চালানো হামলার খবর সংগ্রহ করছিলেন।

ত্রিপুরার সরকার এই ঘটনা অস্বীকার করে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, কোন মসজিদের ক্ষতিসাধন করা হয়নি এবং সহিংসতায় কেউ আহতও হয়নি।

সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝা গ্রেফতার হওয়ার আগে টুইট বার্তায় জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরা পুলিশ উনকোটিতে হোটেলে প্রথমে শনিবার রাতে তাদের আটক করে। পরে রোববার সন্ধ্যায় তাদের যাওয়ার অনুমতি দেয়।

পরে রোববার সন্ধ্যায় আসাম পুলিশ তাদের আটক করে ত্রিপুরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া (ইজিআই) ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসসহ (সিপিজে) ভারতীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘ্টনার প্রতিবাদ জানায়।

সিপিজে এক বিবৃতিতে বলে, ‘সমৃদ্ধি ও স্বর্ণার আটক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।’

ত্রিপুরার সরকারি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বেশ কিছু আইনজীবী, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা করেছে, যারা ওই সহিংসতার ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন।

গত মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের বাড়িঘর বা মসজিদে হামলার বেশ কয়েকটি অভিযোগ ওঠে।

বাংলাদেশে দুর্গাপূজার সময় নানা জেলায় হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে ত্রিপুরায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। সেই মিছিলগুলো থেকেই এসব হামলার অভিযোগ উঠেছিল।

এর পর রাজ্যের কয়েকটি মুসলিম সংগঠন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের সুরক্ষা দেয়ার দাবি জানান।

কিন্তু ত্রিপুরার পুলিশ-প্রশাসন ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা আগাগোড়াই এই সব হামলার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন। তারা দাবি করেন, রাজ্যের শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার মতো আসলে কিছুই হয়নি।

এসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার অভিযোগে ত্রিপুরা রাজ্য পৃলিশ এক শ’র বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি কঠোর সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে পদক্ষেপ নেয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানতে পেরেছে, ত্রিপুরা পুলিশ টুইটারে ৬৮ জন, ফেসবুকে ৩২ জন এবং ইউটিউবে দু্ইজন – মোট ১০২জন অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ নামে ওই কঠোর আইনটি প্রয়োগ করে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পরিচিত সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী আছেন।

এর আগে ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে টুইটারের সদর দফতরে চিঠি লিখে ওই ৬৮টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করারও অনুরোধ জানানো হয়।

সূত্র : বিবিসি ও আলজাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *