করোনাভাইরাস ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট (বংশধর) নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। ইতোমধ্যে ৪২টি দেশে ডেল্টার বংশধরটি শনাক্ত হয়েছে। এর নতুন নাম দেয়া না হলেও ‘এওয়াই.৪.২’ সাঙ্কেতিক নামে ডাকা হচ্ছে। গত জুলাই থেকে ব্রিটেনে এই বংশধরটিকে শনাক্ত করা হচ্ছে। জুলাই মাসের প্রথম থেকে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রিটেনেই ১৫ হাজারের বেশি ‘এওয়াই.৪.২’ সাব-ভ্যারিয়েন্টের করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও এই ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সাপ্তাহিক বিবৃতিতে গত রোববার জানিয়েছে, ডেল্টার নতুন বংশধরটি মূল ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক। এটি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ভারত, ডেনমার্ক, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ইসরাইলসহ ৪২টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলছেন এই অঞ্চলগুলোতে অক্টোবরে যত সংক্রমণ মিলেছে তার ৫.৯ শতাংশের কারণ নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবগুলো ভ্যাকসিনের প্রতিরোধক্ষমতাও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি (এওয়াই.৪.২) ভেঙে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ভ্যারিয়েন্টের ওয়াই১৪৫এইচ এবং এ২২২ভি নামক স্পাইক প্রোটিনটি ভ্যাকসিনের (টিকা) প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনগুলো নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কারের আগেই বাজারে চলে এসেছে। এই দুইটি স্পাইক প্রোটিনকে যেহেতু কোনো ভ্যাকসিনই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি সে কারণে নতুন দুই স্পাইক প্রোটিনই মানবদেহের কোষে আক্রমণ করতে পারে এবং কোষের ভেতর ঢুকে কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলে মানুষ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়ার পরও অরক্ষিত হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ ভ্যাকসিন নেয়ার পর মানুষকে আগের মতোই করোনা আক্রান্ত করতে পারে। অন্য দিকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার হওয়ার আগেই আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন নিয়ে থাকলে শরীরে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণে করোনা আক্রমণ করলেও মানুষকে ক্ষতি করতে পারত না।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এটাই যে পরবর্তী মহামারী ঘটানোর জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট তা বলার সময় এখনো আসেনি। তা সত্ত্বেও এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্রিটেনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ পর্যন্ত যে ৪২টি দেশে ডেল্টার নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে এর ৯৩ শতাংশই ব্রিটেনে।
বাংলাদেশে নতুন এই বংশধর নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। কারণ ভারত, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির সাথে বাংলাদেশের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ভারত ও ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ রয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে চলে এসেছে সতর্ক না হলে ঠিক একই রকমভাবে ডেল্টার নতুন এই বংশধরটি চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক। এর আগে ভারতে ডেল্টা প্লাস নামে আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলেও তা খুব বেশি বিস্তার লাভ করতে পারেনি। মহামারীর কারণ হওয়ার আগেই ডেল্টা প্লাস বিলীন হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত ভাইরাস টিকে থাকার নিজের মধ্যে প্রতিনিয়ত রূপান্তর (মিউটেশন) ঘটিয়ে থাকে। এই রূপান্তরগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিপদের কারণ হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নতুন রূপান্তর ভাইরাসকে আরো দুর্বল করে দেয়। মাঝে মধ্যে কিছু রূপান্তরিত ধরন বিপদের কারণ হয়ে থাকে। যেমন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।