বরিশাল: সন্তানদের ভরণপোষণ বঞ্চিত ৭৫ ঊর্ধ্ব অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের মামলা গ্রহণ করতে তার বাড়িতে ছুটে গেলেন বিচারক। সেখানে সন্তানের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেওয়ার ঘটনায় মামলা নিয়ে ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধা অসুস্থতার কারণে আদালতে আসতে না পারায় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ সশরীরে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে ছুটে যান।
জানা গেছে, মামলার বাদী জাহানূর বেগম বৈদ্যপাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি তার ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ভরণ পোষণ আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, জাহানূর বেগমের চার সন্তান। তাদের মধ্যে দুই ছেলে বড় এবং দুটি মেয়ে ছোট। মেজ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং খুলনার একটি স্বাবলম্বি পরিবারে ছোট মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তারা মায়ের ভরণপোষণ ও কোনো খোঁজ-খবর নেন না। বৃদ্ধা জাহানুর বেগম বর্তমানে তাঁর ছোট মেয়ে সাহিদা বেগমের স্বামীর বাড়ী বরিশাল নগরীতে বসবাস করছেন।
মামলায় বলা হয়- নিজের ভরণপোষণের খরচ যোগাতে খুলনায় স্বামীর বাড়ির কিছু জমি বিক্রি করার জন্য গত ২২ অক্টোবর দুই সন্তানকে বরিশালে আসতে বলেন জাহানূর বেগম। তারা বরিশালে আসলেও বাবার সম্পত্তি বিক্রি করবেন না বলে মাকে জানিয়ে দেন। এমনকি তারা কোন খরচ দিবেন না বলেও জানিয়ে দেন। একথা বলে অভিযুক্ত দুই সন্তান বাড়ি থেকে চলে যান এবং অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের কোন খোঁজ-খবর নেননি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সন্তান জাহানূর বেগম বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। সর্বশেষ ব্রেইন স্ট্রোক, মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিসে ভুগছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩-এর ৫ ধারায় দুই সন্তানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জানিয়ে আইনজীবী আইনজীবী মো. ফজলুল হক বিশ্বাসের মাধ্যমে আদালতে পাঠান শয্যাশায়ী জাহানূর। আইনজীবীর কাছ থেকে বিচারক ঘটনা জানতে পারেন, বাদী শয্যাশায়ী। যার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। পরে এজলাসের কার্যক্রম শেষে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধার বাড়িতে সশরীরে হাজির হন। জাহানূর বেগমের জবানবন্দি গ্রহণের পর বিচারক ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিকাল ৪টায় মামলাটি গ্রহণ করে মেঝ ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ছোট মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে সমন জারি করছেন। এবং আগামী ১ ডিসেম্বর আসামী দুই ভাই-বোনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
একজন বিচারকের এমন উদারতা সাধারণ ও অসহায় মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি বলেন, আদালতের বিচারকসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অমানবিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি। যা বর্ণনার করার মত নয়। বৃদ্ধ নারী খুবই অসুস্থ। এদিকে অসুস্থ জাহানূর বেগমের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রবেশন কর্মকর্তা।