কুমিল্লার নানুয়ারদীঘির পাড়ের ঘটনায় সারা দেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের ৬৪ জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে কয়েকস্তরে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন ফরম্যাটে বার্তা পাঠানো হয়েছে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি ছাড়াও মণ্ডপে সনাতন ধর্মের লোকজন ছাড়া অন্যান্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। পাশাপাশি সাইবার দুনিয়াতে নজরদারি রেখেছে র্যাব ও পুলিশের সাইবার পেট্রোলিং শাখা। কুমিল্লার ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো গোষ্ঠী যাতে উগ্র প্রচার প্রপাগান্ডা, গুজব ও নাশকতার ছক তৈরি করতে না পারে সেইদিকে নজরদারি গড়ে তোলা হয়েছে। এ উপলক্ষে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ব্লগ ও ওয়েব সাইটগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। কারো পোস্ট অথবা মতামত দেখে যদি মনে হয় সে নাশকতার ছক আঁকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে নজরদারি করছে। প্রত্যেক জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল জোরদার করা, এলাকাগুলোর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করাসহ ওই এলাকাগুলোতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের যাতায়াতে নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, দেশের পরিস্থিতি শান্ত আছে।
হঠাৎ একটি গোষ্ঠী পরিবেশকে ঘোলাটে করার জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটানোর পাঁয়তারা করছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে র্যাব’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে আজাদ মানবজমিনকে জানান, ‘একটি গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করতে চায়। কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানান, র্যাব’র টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার জগৎ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা উস্কানিমূলক পোস্ট ও ভিডিও তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে তাদের আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। যারা ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বার্তা পাওয়ার বিষয়ে ফেনী জেলার এসপি খোন্দকার নূরুন্নবী জানান, শুধু ফেনী নয়, সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। আমরা টহল সংখ্যা বাড়িয়েছি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ‘পূজা মণ্ডপগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।’
সূত্র জানায়, প্রত্যেক জেলায় যেসব হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা রয়েছে সেই এলাকাগুলোর বাড়ি এবং তাদের প্রার্থনাস্থল মন্দিরের সামনে পুলিশের টহল বাড়াতে বলা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ঠাকুর ও মান্যবর ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছাড়াও তাদের পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে কি-না তা জানার জন্য খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও এলাকাগুলোতে পুলিশের পিকেট পার্টি, মোবাইল পার্টি ও টহল পার্টিকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, পুলিশ ও র্যাব’র সাইবার টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্কিন শর্ট নিচ্ছে। ভিডিও হলে তারা আপলোড করছে। কোনো গোষ্ঠী যাতে প্রচার-প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকেও তাদের নজর রয়েছে। প্রবাস থেকে কোনো গোষ্ঠী যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেইদিকেও নজর রাখছে তারা।