ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডির শিক্ষা দফতর দেশের শিক্ষক -অশিক্ষক কর্মীদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক ড্রেস কোড এবং নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে।ফেডারেল ডাইরেক্টরেট অব এডুকেশন (এফডিই) যা ইসলামাবাদের ৪০০ টিরও বেশি স্কুল -কলেজের তত্ত্বাবধান করে, মহিলা শিক্ষকদের অফিসের সময় জিন্স এবং আঁটোসাঁটো পোশাক পরা নিষিদ্ধ করেছে। এফডিই ডিরেক্টর একাডেমিকস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সাদিয়া আদনানের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সমস্ত কর্মীদের কর্মক্ষেত্র, প্রাতিষ্ঠানিক প্রাঙ্গন, অফিসিয়াল সমাবেশ, অনুষ্ঠান এবং মিটিংয়ের সময় আনুষ্ঠানিক ড্রেস কোড বজায় রাখতে বলা হয়েছে। নতুন ড্রেস কোড অনুযায়ী, পুরুষ শিক্ষকদের জিন্স এবং টি-শার্ট পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহিলা শিক্ষকদের আবহাওয়া অনুযায়ী ওয়েস্ট কোট/কোট সহ শালওয়ার-কামিজ পরতে বলা হয়েছে। অফিসের সময় পরার জন্য শার্ট (বিশেষ করে টাই সহ পূর্ণ হাতা) এবং ট্রাউজার্স (শুধুমাত্র কটন প্যান্ট) সুপারিশ করা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই জিন্স পরা অনুমোদিত নয়। তবে গ্রীষ্মের সময়ে হাফ হাতা শার্ট পরা যেতে পারে। কিন্তু সব ধরনের টি-শার্ট নিষিদ্ধ এবং শুধুমাত্র ফরমাল জুতা পরতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেবার সময়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়ে তাই পায়ের আরামের জন্য স্নিকার্স এবং স্যান্ডেলের মতো জুতো পরার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ।
তবে হাওয়াই চটি পরা কোনোভাবেই চলবে না। স্কার্ফ কোট দিয়ে পরা যেতে পারে কিন্তু কোন শাল (চাদর) মোটেও অনুমোদিত নয়, ”বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, পর্দানসীন মহিলাদের স্কার্ফ/হিজাব পরিধান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তবে তা যেন কর্মক্ষেত্রে যাবার জন্য মানানসই হয়। সকল এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তাদের ড্রেস কোডের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ড্রেস কোড সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এফডিই-এর পরিচালক শিক্ষাবিদ সাদিয়া আদনান বলেন, গ্রামীণ স্কুলগুলোতে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে মৌখিক আদেশ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।তিনি বলেন, ড্রেস কোড এখন লিখিতভাবে জারি করা হয়েছে, পুরুষ এবং মহিলা উভয় শিক্ষকদের জন্য জিন্স ব্যবহার নিষিদ্ধ। সাদিয়া বলেন , জিন্স কোন ফর্মাল ড্রেস নয় এবং অফিসে সবসময় ফরমাল ড্রেস থাকা উচিত। শিক্ষকরা শিশুদের জন্য রোল মডেল কিন্তু পুরুষ শিক্ষকরা কর্মক্ষেত্রে তাদের সাজের দিকে মনোযোগ দেন না। তাই ড্রেস কোড অবিলম্বে প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাওয়ালপিন্ডির শিক্ষা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০-দফা নির্দেশিকা জারি করেছে, অফিসের সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মুহম্মদ আলী এবং জেলা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাশিফ আজমের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় এই নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, সমস্ত স্কুলের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে সকল শিক্ষকদের তাদের মোবাইল ফোন স্কুল প্রধানদের হাতে তুলে দিতে হবে। জরুরী পরিস্থিতিতে, তারা স্কুলের অধ্যক্ষদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন ।সকল শিক্ষকদের স্কুলের সময়সূচির ১৫ মিনিট আগে স্কুলে পৌঁছতে হবে। স্কুলগুলিকে তাদের এডমিশন পর্ব ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে। এছাড়াও, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, ডেঙ্গু অভিযান, স্কুলগুলিতে করোনাভাইরাস প্রতিহত করার কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । সব সরকারি স্কুলের ভবন রং করার এবং মাঠের সৌন্দর্য বাড়াতে আগাছা নির্মূল করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে।রাওয়ালপিন্ডি জেলার সমস্ত প্রাথমিক, মধ্য, উচ্চ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে শিক্ষা উন্নয়নের তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডির শিক্ষা বিভাগ শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের তালিকা চেয়েছে যারা ছুটিতে বিদেশে গেছেন বা ডেপুটেশনে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন কিন্তু ফেরেননি এবং যারা অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন । শিক্ষা কর্মকর্তাদের তিন দিনের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুল প্রধান ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশে যাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ছুটি শেষে ফিরে এসে নিজ নিজ বিভাগে যোগদান করেছেন কি না, তা জানাতে হবে । ডেপুটেশন পিরিয়ড ও ছুটির দিন শেষে যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাদের কাজে ফিরে আসেননি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
সূত্র: দা এক্সপ্রেস ট্রাইবুন