সিলেট: সিলেট-৩ উপ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রতিদ্বন্ধি জাতীয়পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হলেন। বিজয়ে খুশী হাবিবুর রহমান হাবিবও। জানিয়েছেন, নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে তিনি অতীতের মধ্যে কর্মকা- অব্যাহত রাখবেন। মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে অবিরাম চেষ্ঠা চালাবেন বলেও জানান তিনি। শনিবার সিলেটের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনের এমপি ছিলেন প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর এ আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাথী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব পেয়েছেন ৮৯,৭০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি জাতীয়পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক পেয়েছেন ২৪,৬০৪ ভোট। ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা গেছে; নির্বাচনী আসনের তিন উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। দক্ষিন সুরমা উপজেলায় হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪৩,২০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি জাতীয়পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক পেয়েছেন ১৬,৭১১ ভোট। এছাড়া বালাগঞ্জে নৌকা প্রতীকে হাবিব পেয়েছেন ২৪,২৭৩ ও ফেঞ্চুগঞ্জে পেয়েছেন ২২,২২৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্ধি আতিকুর রহমান আতিক বালাগঞ্জে পেয়েছেন ৩,৩৩৭ ও ফেঞ্চুগঞ্জে পেয়েছেন ৪৫৫৬ ভোট। জাতীয়পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক নিজ এলাকা মোগলাবাজারে বেশি ভোট পেলেও সেখানে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব।
এদিকে, ফলাফল ঘোষনাকালে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আসেন জাতীয়পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। তার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান আতিক। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনী ফলাফলের ঘোষনার এক পর্যায়ে হার মেনে নেন আতিকুর রহমান আতিক। তিনি এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বিজয়ী প্রার্থী হাবিবকে ধন্যবাদ জানান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। এ কারণে ভয়ে অনেক ভোটারই ভোট দিতে যায়নি। এরপরও ফলাফল মেনে নিয়ে তিনি মেনে নিয়েছেন। বলেন, ‘আগামীতে বিজয়ী প্রার্থীর প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
বক্তব্যের পর তিনি হাবিবের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এবং অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ সময় হাবিবও আগামীতে আতিকের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন, সবাই মিলে সিলেট-৩ আসনের মানুষের উন্নয়নের কাজ করতে হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনে হাবিব, আতিক ছাড়াও প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী জুনায়েদ মো. মিয়া। তারা নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তোলতে পারেননি।
সিলেটে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য ছিলো চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। এই নির্বাচনে জাতীয়পার্টি ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার আভাস দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে নিজ দলেও হাবিবের বিরোধীতা ছিলো। নির্বাচনের আগের দিন এসে সিলেট আওয়ামী লীগ কঠোর হয়ে সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলয়ের দুই নেতাকে বহিস্কার করেছিলো। ফেঞ্চুগঞ্জে সাবেক এমপির বিরোধী বলয়ের নেতারা হাবিবের জন্য আটঘাট বেধে মাঠে ছিলেন। বালাগঞ্জে হাবিব এক তরফা জয় পেয়েছে। এ দুটি উপজেলায় হাবিবের সঙ্গে অন্য কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করতেই পারেননি। ফলে দক্ষিণ সুরমায় বাড়ি তিন প্রার্থীর জন্য ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার ভোট ছিলো টার্নিং পয়েন্ট। হাবিব এ দুটি উপজেলায় তার ভোটব্যাংকে অক্ষত রেখেছেন। তবে, দক্ষিণ সুরমার ভোট ভাগাভাগি হলেও শেষ মূহুর্তে এ উপজেলায় জয় দেখেছেন হাবিব। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার আগেই হাবিব ফেসবুক আইডিতে গতকাল বিকেলে শুকরিয়া প্রকাশ করেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেছেন- ‘আলহামদুল্লিাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহ তালার। সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ২০০৮ সাল থেকে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে আসছিলেন। মনোনয়ন নিয়ে তিনি প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তোলেছিলেন। এ কারণে গত এক যুগ থেকে মাঠে থাকা হাবিব স্থানীয়ভাবে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এই নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি নতুন নেতৃত্ব খুজে পেলো।