শ্রীপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ডাকাত ও এক পারভেজের বেড়ে ওঠা

Slider গ্রাম বাংলা


রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পারভেজ হোসেন নামে (২৮) এক যুবক নিহত হয়েছে।

শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ডোমবাড়িচালা গ্রামের সাতচুঙ্গিরপাড় এলাকায় এ ঘটনা বলে জানিয়েছে র‌্যাব। নিহত পারভেজ উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিন ওরফে কালো মিয়ার ছেলে।

র‌্যাব বলছে, পারভেজ একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় ২০টি মামলা রয়েছে। র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, সাতচুঙ্গিরপাড় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা কেনাবেচা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালালে আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে এক রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল এবং আলু ও মুড়িভর্তি দু’টি ব্যাগ পাওয়া যায়। মুড়ির ব্যাগে কয়েক প্যাকেট নীল রঙের ইয়াবা পাওয়া গেছে।

ক্রসফায়ারে নিহত পারভেজ এর ডাকাত হওয়ার গল্প

দিনমজুর বাবার একমাত্র ছেলে মো. পারভেজ মিয়া। জন্মের পরপরই বাবা সিরাজ উদ্দিন ওরফে কালু মিয়া মৃত্যু বরণ করেন। বাবার মৃত্যু পর মা পারভীন আক্তারের বাবার বাড়িতে অর্থাৎ নানা হাসেন আলী ফকিরের ঘরে বড় হয় সে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গোণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারেনি তার দুরন্তপনায়, তবে স্কুল মাঠে ফুটবল, দাড়িয়া বাধা আর হাডুডু খেলায় নিজেকে ধরে রেখেছেন সব সময়। পাশের বাড়ির ছেলেদের ডেকে নিয়ে মাঠে যেত নিয়মিত। ২০০৭ সালের দিকে পাশ্ববর্তী গ্রামের র‌্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত ডাকাত বাবুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে পারভেজ। তার সহযোগী ডাকাত বাবুলকে ২০১৯ সালে র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এরপর থেকে আর বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে পারভেজ। ২০১০ সালের জুলাই মাসে জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের মিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. কবির হোসেনকে হাত পা বেঁধে খিরু নদীর পাড়ে জবাই করে হত্যা করে। এমামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি পারভেজ। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাইথল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনির হোসেনের ব্যাবহীত মোটরসাইকেল উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় পথ রোধ করে ছিনতাই করে পারভেজ। ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে মাদকের বড় চালানের খবরে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে বিপুর পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে পুলিশ। এসব মাদক তার খালু তোফাজ্জলের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। এঘটনা তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়। এতে তার খালু তোফাজ্জল ও মা পারভীন কারাবরণ করেন। ২০১৭ সালে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ছেলে মাহফুজ শফিকের জমির সিমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা দেয় পারভেজ। এঘনায় ম্যানেজার বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি চাঁদবাজী মামলা করে। এমামলায় পারভেজ প্রধান আসামী। এর জেরে ডাকাত পারভেজ ২০২০ সালে জানুয়ারী মাসে ম্যানেজার আব্দুল মতিন মন্ডলকে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে পিটিয়ে দু’টি পা ভেঙে দেয়া। বর্তমানে তিনি পঙ্গু হয়ে দিনাতিপাত করছেন। তাছাড়া তার নির্দেশনায় এলাকায় ছোট বড় ঘটনা জন্ম দিতো প্রতিদিন। রিকশা ছিনতাই,মোটরসাইকেল ছিনতাই, মানুষকে আটকিয়ে বেঁধে রেখে টাকা আদায়সহ অসংখ্য অপরাধের রাজত্ব কায়েম করতো পারভেজ। শীর্ষ ডাকাত পারভেজ র‌্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া বাবুল ডাকাতের সহযোগী। তাদের অন্যতম সহচর হিসেবে কাজ করতো লালু ডাকাত। লালু ডাকাতের বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা, মাদকসহ একাধিক রয়েছে। আরেক সহযোগী রমিজ এলাকায় ছোটখাটো অপরাধের সাথে জরিয়ে রয়েছে নিয়মিত। পারভেজ ডাকাতের মাদক আনা নেয়ার কাজে ব্যবহার করতেন আলাল খান ও শহিদকে। আলাল খান ২০২১ সালে কক্সবাজারে বিপুর পরিমাণ মাদকসহ গ্রেফতার হয়। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে। আরেক সহযোগী শহিদ এমাসের ২২ তারিখে টেকনাফে ধরা পড়েছে মাদকসহ। সেও জেলহাজতে রয়েছে। ডাকাত পারভেজের মা পারভীন আক্তার বলেন, তাকে ভালো করতে অনেক চেষ্টা করছি। চেষ্টা করেও পারিনি। তার খালু তোফাজ্জল হোসেনও অনেক চেষ্টা করেছে
এপথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। সে কারো কথা শুনতো না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *