আবারও প্রণোদনা চান পোশাকশিল্পের মালিকেরা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


ঢাকাঃ চলমান লকডাউন শেষ হলেই সরকারের কাছে আবারও প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করবে বলে নিজ সদস্যদের চিঠিটির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। শনিবার চিঠিটি সংগঠনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে ঈদের পর শুরু হওয়া ১৪ দিনের বিধিনিষেধে কারখানা বন্ধ রাখতে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়ে এ কে এম সেলিম ওসমান চিঠিতে লিখেছেন, বর্তমানে আমরা যে কঠিন সময় অতিবাহিত করছি, সে বিষয়ে সরকার অবগত। চলতি বিধিনিষেধ শেষ হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুনরায় প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করা হবে। তার বিশ্বাস, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন। চিঠির শুরুতে বিকেএমইএর সভাপতি লেখেন, করোনার বর্তমান ধরনটি মারাত্মক। তাই সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে ২৩শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শিল্পকারখানাও এর আওতার বাইরে নয়। যদিও সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যাংকিং ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য বন্দরসংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকছে। মহামারি থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ১৪ দিনের এই বিধিনিষেধে রপ্তানি পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটবে তা ঠিক, কিন্তু ভবিষ্যতে করোনামুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এ সময় তৃতীয় পক্ষের পরামর্শ না নিয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিনিষেধ মেনে চলতে কারখানার মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, চলমান বিধিনিষেধে পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ জানিয়ে ১৫ই জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। সেখানে সব বিষয় আমরা তুলে ধরেছি। বিধিনেষেধের পর কারখানা খোলার পরপরই জুলাই মাসের মজুরি দিতে হবে। তবে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে রপ্তানি না হওয়ায় অধিকাংশ কারখানাই আর্থিক সংকটে পড়বে। ফলে প্রণোদনার বিষয়ে সরকারকে আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর আগে করোনার কারণে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন-এই তিন মাসের মজুরি দেয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। ওই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাকশিল্পের মালিকেরা আরও এক মাসের মজুরি দেয়ার জন্য ঋণ দাবি করেন। সরকারও তা মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। তবে চতুর্থ মাসের বেতনের জন্য ঋণের ক্ষেত্রে মালিকদের সুদ দিতে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকিটা ভর্তুকি দেয় সরকার। রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্যাকেজটি ঘোষিত হলেও তহবিল থেকে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ হাজার ৮০০ পোশাক কারখানার মালিক ঋণ নিয়েছেন। এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ছয় মাস। পরবর্তী ১৮ মাসের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধের শর্ত ছিল। তবে গত বছরের শেষ দিকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রণোদনার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর দাবি জানায়। সরকারও তা মেনে নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রণোদনা তহবিল থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ১ মার্চ থেকে বাড়তি ছয় মাস সময় দেয়ার নির্দেশনা দেয়। ফলে সেপ্টেম্বর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের কথা। অবশ্য গত জুনে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ও বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান যৌথভাবে অর্থমন্ত্রী বরাবর আবেদন করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের টাকা ফেরত না দেয়ার সুবিধা চান। করোনার মধ্যে রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান চলমান রাখতে এই সুবিধা চান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *