পশুর হাটে ভিড় বেচাকেনা কম, দাম চড়া

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

গাবতলীর পশুর হাটে গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া এলাকার ব্যাপারি মো. সিরাজুল হক। তার তিনটি গরুর নামগুলো তিনি মজা করে দিয়েছেন- মোঘলে আজম, সুলতান এবং রাজকাহন। যারাই ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তারাই অপলক দৃষ্টিতে দেখছেন গরুগুলোকে। গরুগুলোর ওজন ও দাম জিজ্ঞাসা করছেন ক্রেতারা। সুলতানের দাম হাঁকানো হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। তবে গরুর ব্যাপারি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। জানালেন, গত ৫ দিন আগে তিনি গরুগুলো গ্রামের তার নিজস্ব খামার থেকে ঢাকায় এনেছেন। সবাই শুধু দাম জিজ্ঞাসা করছেন।

দাম-দর ভালোমতো করছেন না। মানুষ দেখলেই তার গরু কেনার আগ্রহ আছে কিনা বোঝা যায়। কিন্তু, এবারের বাজার মনে হচ্ছে খরা। অনেকেই দাম শুনেই চলে যায়।
গরুগুলো ঈদের আগে বিক্রয় হবে কী-তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। হাটে দেখা গেছে, প্রচণ্ড পরিমাণে লোকজনের ভিড়। সব বয়সী লোকজনের ভিড় আছে। তবে পশু কেনার লোকজন কম এসেছে। হাটে ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। অনেককেই মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এবারের হাটে গত বছরের চেয়ে পশু কেনা ও বিক্রয়ের জন্য হাজারে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে হাসিল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছর হাজারে ৩০ টাকা হলেও এবার হাটে হাজারে ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। হাট কর্তৃপক্ষ জানালেন, এবারের পশুর হাটে উচ্চ দামে ইজারা নেয়া হয়েছে। এ কারণে পশু বিক্রয়ের হাসিলের টাকার হার বেড়েছে। ইজারা নেয়ার টাকা ওঠানো এবং লাভের আশায় তারা হাসিলের টাকা বেশি নিচ্ছেন। পশুর ব্যাপারিরা জানালেন, কোরবানি উপলক্ষে তারা অনেকেই অনলাইনে পশু বিক্রয় করছেন। তাদের কয়েকজন কর্মচারী পশু বিক্রয় করতে অনলাইনে সক্রিয় আছেন। যেসব পশু দৃষ্টিনন্দন ওইসব পশুর ছবি তারা অনলাইনে দিচ্ছেন। করোনা মহামারি এড়াতে অনেকেই হাটে না এসে অনলাইনেই পশু কিনছেন।
তবে অনলাইনে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতারা কোনো পশুর দাম অর্ধেক বলছেন। এ ছাড়াও কিছু পশুর ব্যাপারি অভিযোগ করেছেন যে, হাটে ঢোকার সময় কয়েকজন যুবক তাদের ট্রাক থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছেন। তারা নিজেদের এলাকার প্রভাবশালী বলে দাবি করেছেন। কিছু কিছু ব্যাপারি বিষয়টি পুলিশ ক্যাম্পকে অবহিত করেছেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। গতকাল দুপুরে সরজমিন গাবতলীর হাটে এ চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
গাবতলীর হাটে সরজমিন দেখা যায়, হাটের মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণের ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছিল। এ ছাড়াও হাটে পশুবাহী নতুন নতুন ট্রাক ভিড়ছিল। হাটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বলতে কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। হাটের প্রবেশ পথগুলোতে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। অধিকাংশ মানুষকে মাস্ক ছাড়াই হাটে দলবেঁধে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও পশুর হাটে বাঁশ দিয়ে চত্বর ঘেরাও করতে দেখা যায়নি। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশের যে পূর্ব প্রস্তুতির পরিকল্পনা ছিল তা অনেকটা লক্ষ্য করা যায়নি। হাটের স্বেচ্ছাসেবকরা পশু বিক্রয় করার হাসিল আদায়ে ব্যস্ত। কোনো স্বেচ্ছাসেবক ট্রাক থেকে পশু নামাতে ব্যস্ত। তাদের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা দেখা যায়নি। অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না।
হাটে বিপুলসংখ্যক কোরবানির পশু দেখা গেলেও বেচা-বিক্রি কম। তবে গাবতলীর হাটে এবার গত বছরের তুলনায় ছাগল কম দেখা গেছে। ব্যাপারিরা জানালেন, এবার ছাগলের আমদানি কম হয়েছে। এ ছাড়াও গত বছরের চেয়ে এবারের ছাগলের দাম চড়া। এ কারণে হাটে ছাগল কম নেমেছে।
হাটে দারুস সালাম থেকে আসা আশরাফুল ইসলাম নামে ক্রেতা জানান, তিনি ইতালিতে থাকেন। গত মাসে দেশে এসেছেন। পরিবারের সঙ্গে থাকায় কোরবানি দিবেন বলে হাটে এসেছেন। কিন্তু, হাটে এসে পশুর দাম অধিক হওয়ায় তিনি আজকে কিনবেন না বলে জানালেন। দাম কমলে ঈদের রাতে তিনি কিনবেন বলে জানালেন। সাভার থেকে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, একটি ছোট গরুর দাম ১ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। মাঝারি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ টাকা। যে যেমন পারছেন তেমন করে দাম চাচ্ছেন। নাটোরের গুরুদাসপুরের পশুর ব্যাপারি সুমন জানান, এবারে পশু গ্রামের হাট থেকে ঢাকায় বিক্রয় করতে নিয়ে আসতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও হাটের হাসিল বেশি হওয়ার কারণে তারা বেশি দামে বিক্রয় করছেন। তিনি আরও জানান, অনেক খামারি করোনার কারণে পশু ব্যাপারিদের কাছে বিক্রয় করেনি। অধিক লাভের আশায় ঈদের পর বিক্রয় করবেন বলে পশুর দাম বেড়েছে।
মিরপুর থেকে আসা বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ জানান, হাটে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখা যায়নি। এজন্য মাস্ক ছাড়াই এবং কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই হাজার হাজার লোক হাটে ভিড় করছে।
হাটে পশু বিক্রয়ের হাসিল কেন বেশি হলো বিষয়টি জানতে আনোয়ার হোসেন নামে এক স্বেচ্ছাসেবককে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এবারের হাট অনেক বেশি দামে ইজারা নেয়া হয়েছে তাই বেশি হাসিল আদায় করা হচ্ছে। তবে হাট কর্তৃপক্ষ যেটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন এর বাইরে বেশি নেয়া হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *