তরুণদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বিভ্রান্ত ইতিহাস শেখা ‘সুশীল
ঢাকা: পচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে শুরু হওয়া ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিভ্রান্ত ইতিহাস শেখা প্রজন্ম যতদিন দেশের সুশীল সমাজ নামে আছেন, ততদিন এই সংকট থেকে সরে আসতে পারবো না।”
বুধবার একদল তরুণ-তরুণীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রীর এই তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।
এক বিদেশির সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, ওই বিদেশি তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন- এই যে বাংলাদেশের সংকট, সেটার ভবিষ্যত কি?
জয় বলেন, “এই পরিস্থিতি উত্তরণে সত্য ইতিহাস আমাদের ছেলে মেয়েদের বলতে হবে। আমাদেরকে বলতে হবে, ওরা রাজাকার। ওদের কথা শোনা যাবে না। আমরা বাঙালি, এদেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে দেশের জন্য। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়েছেন।”
“যে জাতি নিজের ইতিহাস ভুলে যায়, সে জাতি কোনদিন আগাতে পারে না। কোথা থেকে এসেছি, কি অভিজ্ঞতা হয়েছে, যদি বারবার ভুলে যাই, তাহলে সেই ভুল বারবার করতে থাকবো।”
অতীত ভুলে গেলে কোনো জাতি এগোতে পারে না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুর নাতি সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ভুলে গেলে কোনদিন আগাতে পারবো না। এগুলোর মানুষ এমনি এমনি ভুলে যায়নি।
“আমাদের এক শ্রেণির লোক বছরের পর বছর ইতিহাস বিকৃতি করে এই ইতিহাস ভোলানোর চেষ্টা করেছে। সেটার কারণটা কি? কারণটা হচ্ছে, সত্তরের নির্বাচনে কিন্তু শতভাগ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। ২২ শতাংশ মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছে।”
“এরাই যুদ্ধের সময় রাজাকার হয়ে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করতে সহায়তা করেছে। কারণ তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা করতো। তারা চায়নি, বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হোক, তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হোক,” বলেন জয়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর মায়ের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ শুরু করেন জয়।
পচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত ভুল ইতিহাস শেখানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীতনয় বলেন, “আমার বয়সী যারা, যারা ৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বড় হয়েছে, ওই সময়ে যারা স্কুলে পড়ালেখা করেছে। তারা কিন্তু আসল ইতিহাস জানতে পারেনি। তাদেরকে একটা মিথ্যা ইতিহাস শোনানো হয়েছে।”
জয় বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়লে মানুষের জন্য করার ইচ্ছা জাগে। এর আগে বিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী তার ছাত্রজীবনে ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্স নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। পরে কর্ম জীবনেও চাকরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
কমিউনিটি সার্ভিসে যুক্ত ওই তরুণ-তরুণীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন জয়।
তিনি বলেন, “আমি কিন্তু শিক্ষার্থী থাকতে সে রকম কোন কমিউনিটি সার্ভিস করি নাই। আমি সায়েন্সের শিক্ষার্থী। ফিজিক্স-ম্যাথমেটিক্স নিয়েই সারাদিন পড়ে থাকতাম। তারপরতো বিদেশেই পড়ালেখা করলাম, চাকরি করলাম।
“সেটা আধুনিক অর্থনীতির দেশ। তাদের ওখানে আমাদের এখানে কমিউনিটি সার্ভিসের তেমন প্রয়োজনও নেই।”
“তবে রাজনৈতিক কারণে কিন্তু দেশের জন্য মানুষের জন্য কিছু করার আকর্ষণ তৈরি হয়। বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, এই যে সন্ত্রাস এই যে নিরীহ মানুষকে পোড়ানো।”
“সাবেক বিএনপি সরকারের আমলে এই পর্যায়ের আরেকটি পরিস্থিতি হয়। তখন একের পর এক বোমা হামলা চলে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো, জঙ্গিরাই দেশ চালাচ্ছে। সেটার মোকাবেলা করার একটা ইচ্ছা জাগলো আমার মধ্যে। আমার দেশকে আমি জঙ্গিদের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি না।”
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন জয়। কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। মাধ্যমিকও শেষ করেছেন ভারতেই।
তিনি বলেন, “আমার একটা স্বপ্ন ছিলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার। ক্ষমতায় আসার পর এই কাজে সুবিধা হলো। আমি মনে করি, আমার কমিউনিটি সার্ভিস হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”