ভয়ঙ্কর জুলাই, গন্তব্য কোথায়?

Slider বাংলার মুখোমুখি


ভয়ঙ্কর জুলাই। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে গোটা দেশই এখন কাবু। সংক্রমণের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জেও। চলতি মাসের ১৬ দিনেই রেকর্ড সংখ্যক প্রায় পৌনে ২ লাখ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, করোনার কারণে এই মাসেই মৃত্যুর বিষাদময় তালিকায় নাম উঠেছে প্রায় ৩ হাজার জনের। ঢামেকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছেন। যা এই তালিকার বাইরে থাকছে। এর মধ্যেই সরকারের লকডাউন ৮ দিন শিথিলতার ঘোষণায় আবারও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমনকি সংক্রমণ বৃদ্ধির সতর্কতার লাল বার্তাও দিয়েছে স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে গবেষকরা দেশে করোনার সংক্রমণের এই উচ্চ ধারা আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন। দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে চালিত গবেষণায় এসআইআর মডেলের মাধ্যমে তারা বলেছেন, দেশে আগস্টের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত দৈনিক ১৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সরকারের যে সক্ষমতা আছে তা দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সংক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ মুহূর্তে ৪২টি দেশের করোনার ভবিষ্যৎ গতি প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক লিসা হোয়াইট এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুলও গবেষণা করছেন। করোনার সংক্রমণের বর্তমান গতি প্রকৃতি বিষয়ে জানতে চাইলে এই অধ্যাপক মানবজমিনকে বলেন, এখন যে করোনার সংক্রমণ ধারা চলছে, এটা এই মাস তো থাকবেই এবং আগামী মাসের মাঝামাঝিতেও যেতে পারে। তাদের গবেষণায় ধারণা করা হয়েছিল যে লকডাউন চলতি মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত থাকবে। এখন যেহেতু শিথিল করা হয়েছে এবং ঈদের পর কঠোর করার কথা বলছে। তাতেও সংক্রমণ আগামী মাসের মাঝামাঝি যাবে বলে তারা ধারণা দিয়েছেন। এই ধারণা এই মাসের ৬/৭ তারিখে তাদের গবেষণায় বলেছেন। সপ্তাহ অন্তর তারা এই ধরনের ধারণা দিচ্ছেন বলেও তিনি তুলে ধরেন। এই গবেষক আরও জানান, আমাদের করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। এখন যা শনাক্ত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে শনাক্ত ১০ গুণের বেশি হবে।

ড. শাফিউন নাহিন শিমুল আরও বলেন, ভারতে যখন ৩ থেকে ৪ লাখ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল, তখনও ওই দেশের শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ওঠেনি। তাতে ভারতকে ভয়াবহ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে বর্তমানে গত কয়েকদিন ধরে করোনা রোগী ৩০ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে শনাক্ত হচ্ছে। এর থেকে বলা যায়, ভারতের চেয়ে আমরা ভালো আছি এটা বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবায় অ্যবস্থাপনা রয়েছে।
এদিকে তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের করোনার গতি-প্রকৃতির ভবিষ্যৎ ধারণা দিয়ে বলা হয়, দেশে আগস্টের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত দৈনিক ১৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। দেশে যে সক্ষমতা আছে তা দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সংক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব না। বর্তমান ব্যবস্থায় ১০ থেকে ১২ হাজার শনাক্ত করার সক্ষমতা রয়েছে। সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে অবস্থা ওতো ভয়াবহ নাও হতে পারে বলে তাদের ভবিষ্যৎ ধারণায় উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের চলতি মাসের ১৫ই জুলাই পর্যন্ত যে ব্যবস্থাপনা নিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে এই ধারণা দেয়া হয়েছে। তারা এসআইআর মডেল ব্যবহার করে এই ধারণা দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসআইআর মডেলে তাদের গবেষণায় ধারণা দিয়ে বর্তমান দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১২ই জুলাই শনাক্ত হবে ১১ হাজার ৮৬৬ জন, ১৩ই জুলাই হবে ১২ হাজার ৩০৫ জন, ১৪ই জুলাই হবে ১২ হাজার ৭৪৭ জন, ১৫ই জুলাই হবে ১৩ হাজার ১৮৮ জন এবং ১৬ই জুলাই শনাক্তের কথা বলা হয় ১৩ হাজার ৬২৮ জনের। অন্যদিকে সরকারি হিসাবে দেখা যায়, ১২ই জুলাই শনাক্ত হয় ১৩ হাজার ৭৬৮ জন, ১৩ই জুলাই হয় ১২ হাজার ১৯৮ জন, ১৪ই জুলাই হয় ১২ হাজার ৩৮৩ জন, ১৫ই জুলাই শনাক্ত হয় ১২ হাজার ২৩৬ জন এবং ১৬ই জুলাই শনাক্ত হয় ১২ হাজার ১৪৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত মোট শনাক্ত করোনা রোগী ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৬২ জন।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১৮৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১২,১৪৮
দেশে করোনায় আরও ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭ হাজার ৪৬৫ জনে। করোনায় নতুন করে ১২ হাজার ১৪৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৯২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে আরও জানানো হয়, ৬২৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজার ৪৫টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৪১ হাজার ৯৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে মারা যাওয়া ১৮৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১১৩ জন আর নারী ৭৪ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেলেন ১২ হাজার ১৬৬ জন এবং নারী মারা গেলেন ৫ হাজার ২৯৯ জন। তাদের মধ্যে বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৮৭ জনের মধ্যে ১০০ বছরের ঊর্ধ্বে রয়েছেন ১ জন, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৪ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে আছেন ১২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৩৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছে ২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৬৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৬ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৪ জন, খুলনা বিভাগের ৩৯ জন, বরিশাল বিভাগের ৮ জন, সিলেট বিভাগের ৯ জন, রংপুর বিভাগের ৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের রয়েছেন ৭ জন। মারা যাওয়া ১৮৭ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৪৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন, বাসায় মারা গেছেন ১২ জন। এদিকে বিভাগ ভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট শনাক্তের ৪০ দশমিক ৭৩ শতাংশ রোগী রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৬৩ জন। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৩০ জন। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৫ জন। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৭৪৫ জন। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৭ জন। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৫৩৫ জন। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৮৪ জন। শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *