গাজীপুরে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের সুখ-দুঃখের সাথী মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

Slider শিক্ষা

গাজীপুরঃ কিন্ডারগার্টেন শব্দটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল সর্ব প্রথম কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদেরকে বাড়ী থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং ‘শিশুদের বাগান’ হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে। বর্তমান পৃথিবীর সকল প্রান্তে কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।
আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক শিশু কিন্ডারগার্টেন নির্ভর।

সাম্প্রতিক অতিমারি করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্বে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির । বাংলাদেশেও সকল শিক্ষালয় বন্ধ প্রায় দেড় বছর। দীর্ঘসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে দেশের কয়েক লাখ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক মন্ডলী ও শিক্ষা উদ্যোক্তাগণ। গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ইতোমধ্যে দেশে বিশ জনের বেশি ক্ষুধার্ত শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। শিক্ষক কর্মচারীদের উপার্জন বন্ধ হওয়ায় তাঁরা খেয়ে না দিনাতিপাত করছেন।

ভৌগলিক কারনে গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। শিল্পের শহর গাজীপুর ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। এখানে কয়েক লাখ শিশুর বিপরীত সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের সংখ‍্যা ৬ শতাধিক।
কিন্ডারগার্টেন সংখ‍্যা বিবেচনায় সারাদেশে গাজীপুর প্রথম। অার কোন জেলায় এত সংখ‍্যক কিন্ডারগার্টেন নেই। সরকার ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহেলায় সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক এক মুঠো ভাতের জন‍্য জীবন ও জীবিকার তাগিদে কেউ গো খামারে কাজ করছেন, হকারি, দিন মজুর, চা দোকানি সহ শিক্ষকতা ছেড়ে কম মর্যাদাপূর্ণ পেশায় চলে যাওয়ার খবর অহরহ ছড়িয়ে পরছে। সার্বিক বাস্তবতায় তুলনামূলক গাজীপুরের অবস্থা একটু ব‍্যতিক্রম। পরিসংখ্যান বলছে গাজীপুর মহানগরে ১২৩০, শ্রীপুরে ৩৭৫, কালিয়াকৈরে ২৬০, কাপাসিয়ায় ১৭৫ ও কালিগঞ্জে ১৬০ টি সহ সর্বমোট কিন্ডারগার্টেন সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লিভ করছে। এখানে ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষিত বেকারের কর্মসৃজন হয়েছে। গাজীপুরে কোন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের আত্মহত্যার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর সিটি মেয়র এ‍্যড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম করোনা মহামারির কথা বিবেচনা করে গেল বছর মে মাসে জেলার কয়েক হাজার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক কর্মচারিদের খাদ‍্য উপহারসামগ্রী প্রদান করেছন। চলতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে তিনি মহানগরীর ৯ হাজার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষককে ঈদ উদযাপনে নগদ অর্থ উপহার দিয়েছেন । এছাড়াও তিনি চলমান প্রাণঘাতি করোনা মহামারিতে গাজীপুরের কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের প্রকাশ‍্যে কিংবা গোপনে মানবিক সহযোগিতা অব‍্যাহত রেখেছেন। আজকের মানবিকতা আগামীর ইতিহাসে নিশ্চয়ই স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হবে।

পেছনের ইতিহাস পর্যালোচনায়,বর্তমান সিটি মেয়র যখন ছাত্রনেতা, তখনই তিনি ব‍্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা এসব কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার মান উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । ২০০৮ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জেলার বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এক বা একাধিক কম্পিউটার উপহার প্রদান করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভোজন, বার্ষিক ক্রীড়া, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা উপকরণ সহ অসুস্থ শিক্ষকদের চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। গাজীপুরে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন যেমন গাজীপুর কেজি স্কুল এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন গাজীপুর, কেয়ার এডুকেশনস্ গাজীপুর, গাজীপুর নন-গভারমেন্ট স্কুল এসোসিয়েশন ও গাজীপুর প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সকল শিশুতোষ কর্মকান্ডে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এছাড়াও
গাজীপুরের সহস্রাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে মোট শিশু শিক্ষার্থীর ৫০ ভাগ শিশু। তিনি প্রতি বছর কোমলমতি কয়েক হাজার শিশুকে বৃত্তি প্রদান করে আসছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চলামান মহামারি দীর্ঘদিন থাকবে। শিক্ষালয়ের দরজা কবে খুলবে তা অনিশ্চিত। এই দুর্যোগ দীর্ঘায়িত হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে জেলার বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন। সচেতন মহলের সাথে আমিও বিশ্বাস করি সিটি মেয়র এ‍্যাড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম একজন প্রকৃত শিক্ষানুরাগি হিসেবে গাজীপুরের কিন্ডারগার্টেন রক্ষায় নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লেখকঃ
মোঃ ইসমাঈল হোসেন (মাস্টার)
শিক্ষা উদ্যোক্তা, গণমাধ্যম কর্মি ও শিশু সংগঠক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *