পর্ব-৭ঃ গাজীপুর নগরবাসীর চোখের জলে রাজপথে বন্যা!

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি টপ নিউজ

গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরে সংরক্ষিত পানির উৎস জবর দখল একটি আয়েসী সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। রাজনীতি ও সুবিধাবাদী রাজনীতির প্রাথমিক জানান দেয়ার লক্ষণ হল সরকারী জমি বা সংরক্ষিত পানির উৎস ভরাট করে স্থাপনার মালিক হওয়া।

গাজীপুর মহুকোমা থেকে জেলা হওয়ার পর এই দখল সংস্কৃতি ব্যপক হারে বেড়ে গেছে। কথিত বুদ্ধিজীবি পরিচয়েও গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির ক্ষমতা ও আমলাতান্ত্রীক সুবিধা গ্রহণ করে ভাওয়াল রাজার সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে দোকানপাট,মার্কেট,বাড়িঘর,বহুতল ভবন এমনকি চায়নিজ রেষ্টুরেন্টও।

গাজীপুর মহানগরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ এস্টেটের অসংখ্য পুকুর খাল-বিল জবর দখল হচ্ছে উৎসবের আমেজে। ছোট নেতা , বড় নেতা, এম পি, মন্ত্রী, সুশীল সমাজ, সাবেক মেয়র,সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলর সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঢালাওভাবে ভাওয়াল এস্টেটের জমি ও সংরক্ষিত পানির উৎস জবর দখল করছে। জাতীয় পার্টি, আওয়ামীলীগ ও বি এন পির অসংখ্যা নেতা কর্মীর দখলে ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি।

ভাওয়াল রাজবাড়ী অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল এস্টেটে, বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ীর আওতায় ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিমি২) এলাকা জুড়ে ছিল যেখানে প্রায় ৫ লাখ প্রজা বাস করতো।

ভাওয়াল এস্টেটের গাজীপুর অফিসের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের সাতটি ও কালীগঞ্জ উপজেলার চারটি মৌজায় ভাওয়াল এস্টেটের জমির পরিমাণ ১৩৮ দশমিক ১৬০০ একর। ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীন এসব জমির ব্যবস্থাপনা করে আসছে ভাওয়াল এস্টেট। বর্তমানে এসব জমি থেকে রাজস্ব আয় হয় কোটি টাকার উপরে। এ জমির মধ্যে লিজকৃত জমি রয়েছে ৬০ দশমিক ০৯৮৩ একর, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে অনুদান ও বিক্রি জমির পরিমাণ ৪১ দশমিক ৮৬৫০ একর। ২০১৬ সালে গাজীপুর জেলা প্রশাসন জারীকৃত সরকারি পরিপত্রের আলোকে মিসকেসের মাধ্যমে ভাওয়াল এস্টেটের ১১ দশমিক ৫৩ একর ভূমি ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত করেছে। এসব হিসাবের বাইরে ভাওয়াল এস্টেটের দখল হওয়া জমির পরিমাণ ২৩ দশমিক ৯০৭২ একর, যার বর্তমান মূল্য কয়েকশত কোটি টাকা।

সরেজমিন জানা যায়, ভাওয়াল রাজার জায়গা জমি থেকে প্রথম একসনা লিজ নেওয়া হয়। পরে নবায়ন হউক বা না হউক ঐ স্থাপনায় গড়ে উঠে পাকা দালান ও বহুতল ভবন। সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর নগর ভবন সংলগ্ন৷ দুটি বিশাল আয়তনের পুকুর ভরাট করে জবর দখল করা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিববাড়ি এলাকায় শিবমন্দির সংলগ্ন একটি পুকুর ময়লা আবর্জনা ভাগারের আদলে জবর দখল চলছে। টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় অবস্থিতি বড় দিঘি নামে একটি বড় পুকুর দখল প্রায় শেষের দিকে।

গাজীপুর শহরের জোড়পুকুর সংলগ্ন ঐতিহাসিক জোড়পুকুর পার আংশিক দখল করে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল বহুতল ভবন। এই ভবনকে ঘিরে নানা মুখরোচক আলোচনা সমালোচনাও রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সংলগ্ন রাজপুকুর পাড় নিত্যদিনেই দখল হচ্ছে। দখলের উৎসবের নেপথ্যে এমন কিছু ব্যক্তিরা কাজ করেন যারা সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংঙ্কিত করেন। ফলে দেখভাল করার সরকার মননীত লোক থাকলেও দখল প্রতিরোধে তেমন কোন প্রভাব নেই ।

নগরবাসীর অভিমত, গাজীপুর মহানগরে জলাবদ্ধতার নেপথ্যে যেসব কারন এর মধ্যে সংরক্ষিত পানির উৎস ভরাট করে জবর দখল একটি কারণ। পানির উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পয়:নিস্কাশন ও অতিবৃষ্টিতে জমা হওয়া পানি নিস্কাশন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে গাজীপুর মহানগরের আভ্যন্তরীন ছোট ছোট নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট হওয়ার সংস্কৃতি। এই দখল সংস্কৃতি প্রতিরোধ করে পরিকল্পিতভাবে পানির উৎস সংস্কার ও নতুন নতুন উৎস তৈরি করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব।
(চলবে…)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *