মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ায় আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। একই সঙ্গে দুদিনের মধ্যে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে হতে পারে বন্যা। গতকাল রবিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী তিন দিনে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের তীব্রতা একটু বাড়বে। বর্ষাকালে তো বৃষ্টি হবেই। কিন্তু আগে যেখানে ৫০ শতাংশ এলাকায় বৃষ্টি হতো, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সেটি এখন হয়তো ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকায় হবে। সে জন্য বৃষ্টিপাত বাড়ার কথা বলা হয়েছে।’ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীগুলোর আশপাশের জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুরে আগামী দুদিনের মধ্যে বন্যা হতে পারে। অন্যান্য জেলাতেও বন্যা হতে পারে, তবে সেটি আরও পরে।’
মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয়টি অঞ্চল বাদে সারাদেশেই সামান্য থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরে, ৮৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে সন্দ্বীপে ৪৮, টেকনাফে ৪০, রাজশাহীতে ৩৯, তেঁতুলিয়ায় ৩০, ডিমলায় ৬৮, রাজারহাটে ২৮ ও মোংলায় ৩৪ মিলিমিটার।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থার বিষয়ে গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীগুলোর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।