গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাধীন বান্টিবাজার থেকে দিনের আলোয় তিনজনকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহৃতরা হলেনÑ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী গ্রামের বাসিন্দা কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. নোমান, মাদ্রাসাছাত্র মো. নাছিম ও আড়াইহাজার এলাকার একটি মসজিদের ইমাম বগুড়ার শহীদুল ইসলাম। ২৫ দিন আগে অর্থাৎ গত ২ জুন একটি সাদা রঙের হায়েস গাড়িতে করে তাদের তুলে নিয়ে যায় মাস্ক পরা কয়েকজন।
এ ঘটনায় অপহৃতদের পরিবার থানায় মামলা-জিডি করতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি। অগত্যা অপহরণকা-ের বর্ণনা করে গত ২২ ও ২৩ জুন পুলিশের মহাপরিদর্শেকের (আইজিপি) কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার (এসপি), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, র্যাব-১১ সহ কয়েকটি দপ্তরে তিনজনের সন্ধান চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অপহৃত নোমানের বাবা মো. সরোয়ার হোসেন। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পারার পর আড়াইহাজার থানাপুলিশ মামলা বা জিডি না নিলেও গত ৪ জুন একটি অভিযোগ নেয়। যদিও ভুক্তভোগী তিনজনের পরিবারের সদস্যরা বলছেনÑ রহস্যজনক কারণে ২০ দিন আগের তারিখ দিয়ে এ অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তিনজনের খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ। গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা।
নোমানের বাবা সরোয়ার হোসেন জানান, তার ছেলে আড়াইহাজারের বান্টিবাজারে ফেব্রিকস ওড়নার ব্যবসা করেন। মোটরসাইকেলে করে তিনি গত ২ জুন দোকানের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে বাজারে পৌঁছলে অচেনা সাত থেকে আটজন লোক নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। একই সময় সেখানে থাকা নাছিম ও শহীদুলকেও তারা জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। এ সময় বাজারের লোকজন তাদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মার্কেটের সামনে ফটকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের আকার-আকৃতি দেখতে পেলেও মাস্ক পরা থাকায় চিনতে পারেননি এলাকাবাসী। পরে নিজের ছেলেসহ বাকি অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আড়াইহাজার থানা ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং স্থানীয় র্যাব কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ জানান নোমানের বাবা। কিন্তু কোনো সংস্থাই ওই তিনজনকে আটক বা গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি।
সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘নোমানের স্ত্রী, ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে আছে। আমার ভাতিজা নাছিম মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। শহীদুল ইসলামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা থানার পশ্চিম টেকানী গ্রামে। তিনি আড়াইহাজার থানাধীন পাঁচকুখী বাজার জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার স্ত্রী ও ছোট এক ছেলে রয়েছে। আমার ছেলের কোনো দল, সংগঠন বা সংস্থার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার পর পরই অপহরণের ঘটনা জানিয়ে আড়াইহাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ তা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেয়। পরে সরকারের কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাইনি। এখন তিনজনের পরিবার-পরিজন দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকূল আবেদন, তিনি যেন আমার ছেলেসহ মসজিদের ইমাম শহীদুল এবং ভাতিজা নাছিমের সন্ধান পেতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।’
অপহৃত ইমাম শহীদুলের স্ত্রী লাবণী আক্তার জানান, তার স্বামীসহ তিনজন কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নন। মামলা দূরে থাক, তাদের নামে থানায় একটি জিডিও নেই। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত নন তারা। তার পরও তাদের তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের মুঠোফোন বন্ধ। ওই তিনজন কোনো অন্যায় করলে তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হোক।
নোমানের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার অবুঝ ছেলেমেয়ে বারবারই বলছেÑ আব্বু কোথায়? আমি সরকারপ্রধানসহ সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, আমার স্বামীসহ তিনজনকে দ্রুত উদ্ধার করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। ২৫ দিন ধরে থানা, পুলিশ, র্যাবÑ সব জায়গায় খুঁজে ফিরছি। কিন্তু কেউ-ই আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারছে না। যত দ্রুত সম্ভব স্বামীসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হোক।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেন অপহৃত মাদ্রাসাছাত্র নাছিমের বাবা সিরাজ মিয়া।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আড়াইহাজার থানার ওসি আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘তিনজন নিখোঁজের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। তবে আমি এ থানায় যোগদানের আগে ঘটনাটি ঘটেছে। তাই তখন কার কী ভূমিকা ছিল, তা বলতে পারছি না।’ সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে ওই নিখোঁজ তিনজনকে খুঁেজ পেতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।