বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভ্যান গাড়িতে করে ভিক্ষা করে বেড়ায় পা হারানো যুবক

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিবেদক: ফজরের নামাজ শেষে সামান্য নাস্তা পানি খেয়ে বৃদ্ধা মাকে ভ্যান গাড়িতে করে জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পড়েন গাছ থেকে পড়ে গিয়ে দু’টি পা অচল যুবক মো. আবুল বাসার (২৩)। মা’কে নিয়ে সকাল সকাল ভিক্ষা করতে যাচ্ছেন উপজেলার কাওরাইদ বাজারে। ভ্যান গাড়ির গতি মোটামোটি ভালো। রাস্তায় যেতে যেতে কথা হয় এই পা হারানো যুবক ও তার বৃদ্ধা মা বেদেনা আক্তারের সাথে। ২০১৬ সালে পাশ্ববর্তী গ্রামে নারিকেল গাছে থেকে পড়ে পা হারায় মো. আবুল বাসার। পা হারানোর পর থেকে মা, স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে মাইশা (০৮) কে নিয়ে চার বছর ধরে বসবাস শুরু করেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবদার গ্রামের স্থানীয় মো. লেবু মিয়ার বাড়িতে থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালান পা হারা যুবক মো. আবুল বাসার।

পা হারানো মো. আবুল বাসারের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বনগাভী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. সুরুজ আলী।

জানাযায় মো. আবুল বাসারের জন্মের পূর্বেই বাবা মো. সুরুজ আলী মৃত্যু বরণ করেন। জন্মের পর মা বেদেনা খাতুন মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্ট করে সন্তানকে বড় করেছে। বড় হয়ে জীবিকার তাগিদে মো. আবুল বাসার পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন নারিকেল গাছ ছাঁটানো। মানুষের নারিকেল বাগনের গাছ ছাঁটানো কাজ করে সুন্দর ভাবে চলছিলো তাঁর ছোট্ট সংসার। একদিন নিজ উপজেলার পাশ্ববর্তী গ্রামে নারিকেল গাছ ছাঁটানোর সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে দু’টি পা হারায়। অনেক চিকিৎসা করেও ভালো করে তুলতে পারেনি দু’টি পা। ঘরে বসে কাটাতে লাগলো তাঁর অলস সময়। চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো সে। সেই মুহুর্তে স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরামর্শে একটি ভ্যান গাড়ি কিনে শুরু হয় তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই।

পা হারানো মো. আবুল বাসার জানায়, ৫বছর আগে পাশের গ্রামের এক বাড়িতে নারিকেল গাছ ছাঁটানোর সময় গাছ থেকে পড়ে দু’টি পা ভেঙে যায়। এরপর অনেক চিকিৎসা করার পরও পা দু’টি সেরে উঠেনি। বর্তমানে দাঁড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান গাড়িতে মাকে নিয়ে হাট বাজারে ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালায়। আমার সংসারে উপার্জন করার মত তেমন কেউ নেই। তাই বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভিক্ষা করি।

পা হারানো মো. আবুল বাসারের মা বেদেনা আক্তার জানায়, গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ছেলের সঙ্গে ভ্যান গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে সহযোগিতা করি। পা ছাড়া সে কিছু করতে পারে না তাই সব সময় ছেলের সাথে থাকি। সে একা দাঁড়াতে পারে না এজন্য তাকে একা ছাড়তে পারি না। যতদিন বেঁচে থাকবো এভাবেই ঘুরতে হবে। কি আর করা সবাই ভাগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *