বিকল্প উপায়ে পাঠদানের উদ্যোগ

শিক্ষা


দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর এবার আঘাত হানছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। এ অবস্থায় আবারো অনিশ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলেও একাধিক বিকল্প নিয়ে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অবহিত করতে একটি রোডম্যাপ দেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

করোনার প্রভাবে গত ১৫ মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাতিল হয়েছে গত শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষাও। অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী অটো প্রমোশন নিয়ে উপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্য দিকে করোনার কারণে বাতিল হয়েছে সবগুলো পাবলিক পরীক্ষা। এর মধ্যে বেশি আলোচনায় ছিল গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ও অটো পাসের বিষয়টি। তবে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসিসহ সমমানের অন্যান্য পরীক্ষা বাতিল না করে বরং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সেগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে ১৩ জুন থেকে স্কুল কলেজ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে সারা দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করে এখন তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানছে। তাই চলমান লকডাউনও বাড়িয়ে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তাই সহজেই ধারণা করা হচ্ছে স্কুল-কলেজ শিগগির খুলছে না। এই বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিকল্প উপায়ে পড়ার টেবিলে ফেরাতে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই এমন একটি রোডম্যাপ দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিকল্প হিসেবে দু’টি পদ্ধতিকেই এখন বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রথমত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস্টার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শিক্ষা টিভি চালু করে শিক্ষার্থীদের অধিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে তাদের পড়ালেখায় মনোযোগী করা। আর এ লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে একটি চিঠিও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্য দিকে করোনার মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি না খুলে আংশিক বা ক্লাস্টারভিত্তিক ক্লাস করার একটি উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর, বয়স এবং শাখাভিত্তিক ডিভিশনে ভাগ করা হতে পারে। তারপর শ্রেণী বা বিভাগ অনুযায়ী সপ্তাহে এক বা দু’দিন করে ক্লাস করানো হতে পারে। আর এই নিয়ম চালু করতে পারলে একেক দিন একেক ক্লাস্টারের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে আসবে। ক্লাস্টারের আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সে দিন শ্রেণিকক্ষে আসবে না তাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। বাড়িতে বসে তারা অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করবে। পাশাপাশি অনলাইনে ক্লাস করানো হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সীমিত পরিসরে ক্লাসে উপস্থিত করাটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। আর এটার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ বিষয়ে জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে অথবা ক্লাসে ফেরাতে একাধিক বিকল্প নিয়ে কাজ করছি। আমরা মনে করি, করোনার এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো নয়। তারপরেও আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে কাজ করছি। তিনি জানান, ক্লাস্টারভিত্তিক শিক্ষাদান ছাড়াও শিক্ষা টিভি চালু করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। শিক্ষা টিভি চালু হলে হয়তো একসাথে জনসংখ্যার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দেখবে এবং তা থেকে ১০ থেকে ১২ শতাংশও যদি উপকৃত হয় তাহলেও অনেক শিক্ষার্থী সুফল পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *