শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়তে পারে

Slider শিক্ষা

দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে রেখেছে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই ছুটি আরও বাড়তে পারে। গোটা জুন মাসই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকতে পারে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।

তবে সংশ্লিষ্টরা এও জানান যে, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে সীমিত পরিসরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রম চালুর চিন্তা আছে। কেননা গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাশ’ দেওয়ায় সমালোচনা হয়েছিল। এ কারণে এবারের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েই ফল দেওয়ার বিষয়টি ঠিক করেছে সরকার। যদিও কবে নাগাদ এই পরীক্ষা নেওয়া যাবে আর কবে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যাবে সে বিষয়টি কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। সর্বশেষ শুক্রবারের হিসাব অনুযায়ী দেশে করোনা সংক্রমণের হার ৮ দশমিক ২২ শতাংশ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সরকারের এ মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যে কোনো মূল্যে এসএসসি ও এইচএসসি নেওয়া। গত বছরের মতো পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণের ফল বা গ্রেড দেওয়া হবে না। সংক্রমণ কমলে ‘কাস্টমাইজড’ (বিশেষায়িত) সিলেবাসের ভিত্তিতে নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাস নেওয়া হবে। এরপরই পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু বিদ্যমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ পরীক্ষা নেওয়া যাবে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে সেটা নিশ্চিত নয়। এ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। তবে আমরা পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো এলাকার সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামলে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। তবে যেহেতু প্রতিবেশী দেশে করোনার বড় ধরনের ঢেউ চলছে এবং করোনার ওই (ভারতীয়) ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ ছড়াচ্ছে, এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ কমে এলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনই খুলে না দিয়ে কিছুটা সময় নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে গোটা জুন মাসও অপেক্ষা করার চিন্তা আছে বলে মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এরপরও এ বিষয়ে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে, যা ২৮ মে প্রকাশ করা হবে।

তবে আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ খোলা হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকেও পরামর্শ আছে। আর পরিস্থিতি আরেকটু উন্নতি হলে পঞ্চম এবং নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গ্রুপ করে সপ্তাহে একদিন ক্লাসে উপস্থিত করার পরিকল্পনা আছে।

ঢাকা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, এই মুহূর্তে খুব জরুরি হচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়ে আসা। পরিস্থিতির উন্নতির ওপরে এটি নির্ভর করবে। আর জেএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে হয়তো ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়, সেই নীতি অনুসরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির মধ্যে প্রথম পরীক্ষাটি আগে নেওয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের একটি পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ, উত্তরপত্র প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কাজ থাকে। এই পরীক্ষাটি নেওয়ার ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর ৬০ কর্মদিবস এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। আর ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস হবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। সেটা অনুযায়ীই কাস্টমাইজড সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১৪ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যা পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠছে। কতটুকু শিখল, সেটাও যাচাই করা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯৭ শতাংশ অভিভাবক চাচ্ছেন তাদের সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে। অর্থাৎ তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। ওই গবেষণা অনুযায়ী, করোনাভাইরাসজনিত বন্ধের কারণে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ইউনেস্কো-ইউনিসেফের গবেষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় করোনা সংক্রমণ লাগামের মধ্যে এসেছে- এমন কথা বলার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই কেন্দ্রের (মন্ত্রণালয়ের) সিদ্ধান্তে স্থানীয় চাহিদা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে নমনীয় শিক্ষাপঞ্জি তৈরি করা যেতে পারে। সেটার আলোকে যে এলাকায় সংক্রমণ কম সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *