ঘরে বসেই মিলবে জমি অধিগ্রহণের মূল্য

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্য ছাড়াও পদে পদে হয়রানির দিন শেষ হচ্ছে। পাশাপাশি নয়ছয় করে ভুয়া অবকাঠামো দেখিয়ে রাতারাতি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মূল্য বাড়ানোর পথও বন্ধ হবে। ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে অধিগ্রহণ মূল্য সরাসরি দাতার ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।

এ সংক্রান্ত বিধির সংশোধন প্রস্তাব এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের জন্য শিগগির প্রস্তাবটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হয়রানি-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ সবার জানা। বিশেষ করে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কেবল তারাই জানে ডিসি অফিসগুলোর এলএ শাখা থেকে তাদের কীভাবে পদে পদে হয়রানি ও নাজেহাল করা হয়। চাহিদামাফিক অলিখিত কমিশন দিতে রাজি না হলে নানারকম আপত্তি, নথি থেকে কাগজপত্র সরিয়ে ফেলাসহ পালিত দালাল চক্র দিয়ে মামলাও ঠুকে দেওয়া হয়। যেসব জেলায় জমির মূল্য যত বেশি, সেখানে এ ধরনের হয়রানির অভিযোগ তত বেশি।

অপরদিকে ভুয়া অবকাঠামো দেখিয়ে নাল শ্রেণির জমিকে রাতারাতি ভিটি শ্রেণি দেখিয়ে মূল্য কয়েকগুণ বেশিও দেখানো হয়। এগুলো হয়ে থাকে উভয়পক্ষের যোগসাজশে। তাছাড়া কয়েক বছর থেকে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নতুন এক ফাঁদ তৈরি হয়েছে। সেটি হলো-কোথাও অধিগ্রহণ প্রস্তাব চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হলে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার ভূমি কর্মকর্তারা নামে-বেনামে সংশ্লিষ্ট জমি নিজেরাই কিনে নেন। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ বায়না চুক্তিও করে থাকেন। ফলে অধিগ্রহণ প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে তারা তিনগুণ দাম পেয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান।

এছাড়া নিজেরা হর্তাকর্তা হওয়ায় ভুয়া অবকাঠামো দেখিয়ে শ্রেণি আপগ্রেড করে মূল্য আরও বাড়ানো হয়। এর ফলে আর্থিকভাবে রাষ্ট্র চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। এ কারণে অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যায় অধিগ্রহণ খাতে।

জানা যায়, এসব কারণে মাঠ প্রশাসনে এলএ বা ভূমি অধিগ্রহণ শাখাগুলোকে প্রাইজপোস্টিং বলা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ও এসব অভিযোগ সম্পর্কে কমবেশি অবগত। বিভাগীয় কমিশনারদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়গুলো নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তাও হয়রানি-দুর্নীতির বেশ কিছু কেসস্টাডি সম্পর্কে জানেন। এ অবস্থায় অধিগ্রহণ নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ সংক্রান্ত বিধিবিধান হালনাগাদ করে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে।

এর মধ্যে অন্যতম হলো-এলএ শাখার পরিবর্তে প্রথমে সংশ্লিষ্ট জমির ডিজিটাল সার্ভে, শ্রেণি চিহ্নিতকরণ এবং প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হবে। যারা সার্ভিস চার্জ নিয়ে উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবে। জমির স্থির ও ভিডিও চিত্রও ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে ড্রোন দিয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে হবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় সব তথ্য যুক্ত করে ডিসি বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দিতে হবে।

তবে এই রিপোর্টের কোনো তথ্য নিয়ে জালজালিয়াতি করলে সেখানে শাস্তির বিধানও রাখা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি নিয়ে ভেটিং করবে। এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিগ্রহণ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হবে। একনেক সভা থেকে প্রকল্প অনুমোদনের মধ্য দিয়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে। এরপর স্বল্প সময়ের মধ্যে এএফটি পদ্ধতিতে দাতার ব্যাংক হিসাবে পুরো অর্থ হস্তান্তর করা হবে।

এ সংক্রান্ত ক্ষুদে বার্তা তার মুঠোফোনেও পাঠানো হবে জেলা প্রশাসন থেকে। এক কথায়, কোনো হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসেই মিলবে অধিগ্রহণ মূল্য। সূত্র জানায়, অনেক সময় মামলা করে হয়রানি করা হয়। এজন্য মামলা সংক্রান্ত পুরো বিষয় সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *