খালেদাকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী!

Slider জাতীয়

hasina_sm_832105364
ঢাকা: এত দিন গ্রেফতারের দাবি ছিল, সম্মতি ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। এবার তিনি সম্মতি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের। এজন্য দলের একজন সিনিয়র আইনজীবীকে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডায়লগের (সংলাপ) নামে কোনো অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করব না। বৈঠকের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু পেট্রলবোমা হামলায় মানুষ হত্যার সবগুলো ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে মামলা না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। খসরু মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার গ্রেফতারও দাবি করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার আসামি করা প্রসঙ্গে বলেন, আপনি দেখছেন না কেন? আপনি তো দলের আইন সম্পাদক। এ সময় মতিন খসরু খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ব্যাপারে বলেন, নেত্রী আপনি বলে দিলেই তো হয়। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে বলতে হবে কেন? আপনি আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করুন। তিনি কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সারা দেশে আমাদের এত আইনজীবী রয়েছেন। তারপরও আমাকেই বলতে হবে কেন? আপনি নিজেই আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। এ সময় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে মহিলা নিজের ছেলের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক থাকতে পারে, ছেলের লাশ বাসার নিচে অপেক্ষায় রেখে তা দেখতে আধা ঘণ্টা পরে নিচে নামেন, তাকে সুস্থ মানুষ বলা যায় না। তার মানুষ মারার এসব কর্মসূচিও স্বাভাবিক কোনো কর্মসূচি নয়। তাদের অব্যাহত নাশকতার সমুচিত জবাব দেয়া দরকার। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা না পারলে প্রয়োজন হলে ওনাকে (খালেদা জিয়াকে) গ্রেফতার করা হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নাশকতা প্রতিরোধে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থেকে জনগণকে সচেতন করার নির্দেশনা দেন। তার দাবি জনগণ নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিতে শুরু করেছে। এটি অব্যাহত ও জোরদার করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি জোটের চলমান কর্মসূচি আন্দোলন নয়, এটি সন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে এটি ঘটলেও এর শেকড় আছে অনেক দূরে। বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এখানে একটি গোষ্ঠী আইএসের মতো সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরির চেষ্টা করছে। ফলে তাদের প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি জোটের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববাসীর সমর্থন নেই। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমতাজউদ্দিন মেহেদী দল এবং সুপ্রিমকোর্টের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা তাকে অবমূল্যায়ন করছেন বলে অভিযোগ করে উচ্চস্বরে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। এ সময় শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ নেতারা তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে মেহেদী নিজেই তার এই ধরনের বক্তৃতার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চান।
বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। রাজশাহী বিভাগের সব জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ায় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে এই টিমকে ঢাকা বিভাগের সম্মেলনে সহযোগিতা করার জন্য দায়িত্ব দেন তিনি। এ সময় ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে কথা ওঠে। তখন প্রধানমন্ত্রী জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে দুটি কমিটি গঠন করা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আজমতউল্লাহ খান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি এপ্রিলের মধ্যে সব জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেন। সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচনে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের বারবার পরাজয়ে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত নেতাদের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বারের নির্বাচনে আমাদের বারবার পরাজয় হচ্ছে। কেন হচ্ছে এ বিষয়টি আমি জানি। আপনারা বিষয়টি দেখেন। না হলে পরের নির্বাচনে আমি নিজেই এ বিষয়টি দেখভাল করব। বৈঠকে মহান শহীদ দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ বলেন, যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, যারা খুনি, তাদের সঙ্গে সরকার কিভাবে আলোচনা করবে। এইসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে বলব, কঠোর হাতে নাশকতাকারীদের দমন করতে। আশরাফ দাবি করেন, দেশের বর্তমান সংকট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনের জন্য না। লক্ষ্য করুন, বিশ্বে কি হচ্ছে? জর্ডানের পাইলটকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসের মতো একটা শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যারা এগুলো ঘটাচ্ছেন, যেভাবেই হোক এদের সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা হবে। সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি আসলে দেশে ১৯৭১ এর মতো গণহত্যা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। লেবানন, সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। পৃথিবীতে কি হচ্ছে আজকে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে শক্তিশালী সরকারের বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারলে দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি আসতে পারে। এই পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না। দেশের সব প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী পেশার মানুষকে এদের বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *