ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে চলছে কঠোরভাবে বিধি নিষেধ বা লকডাউন। সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত সবাইকে ঈদের ছুটিতেও নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জনসমাগম ঘটাতে নিরুৎসাহিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।
এর মধ্যেও রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এসেছেন। বহিরাগত এসব মানুষ শুক্রবার ঈদের দিন দুপুর থেকে চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে জড়ো হয়। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সড়কের ৫ কিলোমিটার জনবসতি বিচ্ছিন্ন এলাকাজুড়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
উল্লেখ্য, চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়ক নির্মাণ করা হয়। আট বছর ধরে নির্মাণকাজ চলা সড়কটি গত বছরের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়। ১৮ কিলোমিটার সড়কের ৫ কিলোমিটার চলনবিলের মধ্য দিয়ে হওয়ায় সড়কের এই অংশে তেমন জনবসতি নেই। দু’পাশে শুধু ফসলের মাঠ ও খাল বিল। তাই চলনবিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সড়কটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন বেড়াতে আসেন এই এলাকায়। বর্তমানে ভাঙ্গুড়া উপজেলা সহ আশেপাশের উপজেলার মানুষের কাছে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এই সড়কটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়।
শুক্রবার (১৪ মে) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌবাড়ীয়া গ্রাম থেকে ময়দানদিঘী গ্রাম পর্যন্ত সড়কের ওপরে নারী-পুরুষ ও শিশু সহ অন্তত ২০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, অটো ভ্যান গাড়ি, মাইক্রোবাস, নসিমন, করিমন ও প্রাইভেটকারে চড়ে এসব উৎসুক মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। এমনকি দেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও উপজেলার বাহির থেকে মিনিবাসে চড়ে অনেক ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষ সড়কে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আড্ডা দেন। এই আড্ডা জমজমাট করতে সড়কের ওপরেই কিছুটা দূরত্বের ব্যবধানে অসংখ্য ফুচকা ও চটপটির দোকান বসেছে।
সড়কের দুই পাশে আধা পাকা ধান বাতাসে দুলছে। অনেকে ধানের ক্ষেতের মধ্যে গিয়ে মোবাইলে সেলফি তুলছেন। কেউ বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছবি তুলে ঈদ আনন্দকে আরো বেশি উপভোগ করতে চেষ্টা করছেন। অনেক উচ্ছৃংখল যুবক নসিমন গাড়িতে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে এলাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। যানবাহনের চাপে সড়কের ওপর গাদাগাদি ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে চলে সবাই। তাই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা তো কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি। এ সময় অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্কও ছিল না।
ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, কয়েকগুণ টাকা খরচ করে ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছি পরিবারসহ। বাবা-মাসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব। তাই পরিবারের সকলে মিলে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে উপজেলার সবচেয়ে মনোরম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত চলনবিল এলাকা দেখতে এসেছি। করোনার ভয়ে স্বাস্থ্যবিধির চিন্তা করলে তো আর ঢাকা থেকে বাড়িতে ঈদ করতে পারতাম না। তাই করোনা নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না। এখন ভালোয় ভালোয় ঢাকা ফিরতে পারলেই হলো।
ভাঙ্গুড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, সড়কটি উদ্বোধনের আগে থেকেই ঈদের দিন হাজার হাজার মানুষ আনন্দ-বিনোদন করতে আসেন। গতবছর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়ার পর এলাকার মানুষ সড়কের নির্জন এলাকা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। বর্ষাকালে প্রচুর মানুষ এই সড়কে এসে বর্ষার রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে। তবে এর আগে কখনো এতো মানুষ একসঙ্গে জড়ো হয়নি। তাই করোনা সংক্রমণের মধ্যে এত মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একসঙ্গে জড়ো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হলো।