এক ফেরিতেই ৩ হাজারের বেশি যাত্রী

Slider জাতীয়

আর কদিন বাদেই মুসলমান ধর্মবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দেশে করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর স্বাভাবিকভাবে ঈদের খুশি পালন করতে পারেনি জনগণ। করোনার সংক্রমণ এ বছরও ব্যাপক। বলা বাহুল্য এবারও মনে খুশি রেখে ঈদ পালন করতে পারবেন না অনেকে। ঈদের খুশির সবচেয়ে বড় অধ্যায় হলো নাড়ির টোনে বাড়ি ফেরা, বাবা-মার, ভাই-বোন, আত্মীয়দের সঙ্গে খুশি ভাগ করা। কিন্তু, দূর পাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় যারা প্রতিবছর ঈদ পালনে বাড়ি যান, তাদের উপর খড়্গ পড়েছে। তারপরও কোনো না কোনো উপায়ে বাড়ি ফিরতে চায় মানুষ। সেই চেষ্টা দেখা গেলো- বাংলাবাজার-শিমুলীয়া নৌরুটে। আবার জানা গেছে, যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্পিডবোট-ট্রলারের পাখা খুলে নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে এ রুটে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে যাত্রী চাপে ফেরিতে গাড়ি উঠতেই হিমশিম খাচ্ছে। রো রো ফেরি এনায়েতপুরির এক ট্রিপেই আজ শুক্রবার পার হয়েছে ৩ হাজারের বেশি যাত্রী। জানা গেছে, যাত্রীদের চাপে ফেরির এ যাত্রায় কোনো গাড়ি যেতে পারেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়ে যায়। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার ও ইজি বাইকে কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে নিজ গন্তব্যে যাত্রা করছেন।

যাত্রীদের ভিড় ও স্পিডবোট-ট্রলারে পারাপার রুখতে অভিনব একটি পন্থা অবলম্বন করছে বাংলাবাজার ঘাট উপজেলা প্রশাসন। জীবনের হুমকি নিয়ে কেউ যাতে স্পিডবোট-ট্রলারে ভ্রমণ না করেন, এবং এই দুই জলযানের চালকরা যেন অযাচিত ফায়দা লুটতে না পারে, তাই যানগুলোর পাখা খুলে নিচ্ছে প্রশাসন ও পুলিশ। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস।

ঘাট সূত্র জানায়, রো রো ফেরিতে গাদাগাদি হয়ে পারাপার হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বালাই ছিল না। ঢাকা থেকে বিভিন্ন হালকা যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে এসে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে পৌঁছাতে যাত্রীরা আরোও ভোগান্তির শিকার হন। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় বাংলাবাজার ঘাট থেকে ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে বরিশালে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গোপালগঞ্জ ৫০০ টাকা, খুলনা ৭০০ টাকা, মাদারীপুর ২০০ টাকা, বাগেরহাট ৬৫০ টাকাসহ প্রতিটি যানবাহনেই যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

পরে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তারা অভিযান চালিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের স্পিডবোট-ট্রলারের পাখা খুলে নেন। এ ছাড়া কয়েকটি মাইক্রোবাস আকট করেন। কোনো অবস্থাতেই অবৈধ নৌযান-যান চালানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন ইউএনও এবং ওসি দুজনই।

রো রো ফেরি এনায়েতপুরির সেকেন্ড মাস্টার ইনচার্জ আমির হোসেন বলেন, ‘আজ শিমুলিয়া থেকেই একটি ট্রিপেই ৩ হাজারের বেশি যাত্রী পার করেছি। ওই ট্রিপে কোনো গাড়ি উঠাতে পারিনি। শুধুমাত্র ৫০টি মটরসাইকেল উঠেছে। আর বাকি ট্রিপগুলোতেও যাত্রীর চাপ বেশি। ফলে যানবাহন কম উঠেছে।’

বিআইডব্লিউটিসি’র মেরিন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, ‘যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকায় ফেরিতে যানবাহন পারাপার বিঘ্ন ঘটছে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে বাংলাবাজার ঘাট থেকে কোনো লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ছাড়তে পারবে না। ইতিমধ্যেই যানগুলোর পাখা খুলে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্পিডবোটে নির্ধারিত আসন তৈরি করে যাত্রী পারাপার করতে হবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *