করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে এক সপ্তাহের লকডাউনে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ১৭ এপ্রিল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিদেশী এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়েছে।
সৌদি আরব, কাতারের দোহা, সিঙ্গাপুর, আমিরাতের আবুধাবী ও ওমানের মাস্কাটে (৫ দেশ) যাওয়ার জন্য ওই দিন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলাসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট শুরু হয়। ফ্লাইট শুরুর প্রথম দিন ভোরে সৌদি আরবের রিয়াদগামী ফ্লাইটে বেধে যায় বিপত্তি। দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি না পাওয়ায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই ওই ফ্লাইটের শত শত যাত্রীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। একপর্যায়ে ফ্লাইটটি বাতিলের কথা জানালে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিমানবন্দরেই তারা করেন বিক্ষোভ। এ অবস্থায় শনিবার সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মামসহ অন্য চার দেশ থেকে ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়ার কথা জানায় বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে সিঙ্গাপুরের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
গতকাল রোববার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্সের বিশেষ দু’টি ফ্লাইটে সৌদি আরব ও ওমানের মাস্কাটের উদ্দেশে পাড়ি জমান ৪৭৬ শ্রমিক। তবে সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইট না ছাড়ার কারণে এর কিছু যাত্রী বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান নেন। তারা ব্যানার হাতে দ্রুত দেশটিতে পাঠানোর জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, টিকিট কাটা হয়েছে, কোভিড ১৯ পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। এখন ১৯ এপ্রিলের মধ্যে তারা যেতে না পারলে ভিসা জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর যদি সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট ছাড়া অনিশ্চিত হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে বলে তারা আশঙ্কার কথা জানান সাংবাদিকদের।
যদিও গতকাল রোববার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যে অনুমতির দরকার সেটির আবেদনই তারা করতে পারেননি। আজ সোমবার দেশটির সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাছে ল্যান্ডিং অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ২০ এপ্রিলের আগে ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। এমন তথ্যই সিঙ্গাপুরে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার এক ই-মেইল বার্তায় বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বিমানের বলাকা ভবন সূত্র জানায়, গতকাল ভোর থেকে ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট পাঁচটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। এর মধ্যে দাম্মামের ফ্লাইট সকালে চলে গেছে। জেদ্দার ফ্লাইট রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। এক ঘণ্টা পর দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে অপর ফ্লাইট ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। আর রোববার দিবাগত রাত ৩টায় রিয়াদের উদ্দেশে বিমানের অপর ফ্লাইট যাওয়ার কথা। এর মধ্যে বিমানের একটি ফ্লাইট (কার্গো) ক্যান্টন গুয়াংজু যাওয়ার শিডিউল আছে।
এ দিকে গতকাল সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যারাবিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে ৪৭৬ জন শ্রমিক সৌদি আরব ও ওমানে পাড়ি জমান। এর মধ্যে বিমানের ফ্লাইটে ২৭১ জন ও এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে ২০৫ জন। জানা যায়, গতকাল রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ৯টি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ ও সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অপর দিকে নির্ধারিত সময়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজধানীর কাওরান বাজার প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সামনে হাজারো টিকিটপ্রত্যাশী ভিড় করেন। তারা তাদের বাতিল হওয়া টিকিটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য ভিড় করছেন বলে জানান। গতকাল রোববার সকাল থেকে কাউন্টারের সামনে ভিড় হওয়ার কারণে কাওরান বাজার থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত এলাকা সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে মাইকিং করে ১৪ এপ্রিলের দাম্মাম, রিয়াদ ও জেদ্দা রুটের ফ্লাইটের যাত্রীদের ভেতরে নেয়া হয়। অন্য বাইরে অপেক্ষায় থাকেন। টিকিট বিক্রির বিষয়ে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দেয়ালে সাঁটানো নোটিশে বলা হয়, অফিস টাইম পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ এপ্রিলের বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের টিকিট দেয়া হবে। অন্য তারিখের টিকিটগুলো সাউদিয়ার ওয়েবসাইট বা ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে স্বাভাবিক নিয়মে কাটা যাবে।