‘জোর করে’ শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ায় স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন

Slider নারী ও শিশু


রাজশাহী: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ১৪ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক কিশোরী স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে ওই স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছেন স্বামী। গত মঙ্গলবার উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের বিষহারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত ওই যুবকের নাম হারুণ হারুন-অর-রশিদ (২৮)। তিনি এলাকার বয়জুল মণ্ডলের ছেলে। আর কিশোরীর নাম কারিমা (১৪), সেও একই এলাকার কামাল হোসেনের মেয়ে।

হত্যাকাণ্ডের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে করিমা জানায়, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে হারুন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইলে বাধা দেয় সে। এ নিয়ে তাকে চড়-থাপ্পড়ও দেয় স্বামী হারুন। পরে তার স্বামী আবারো শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইলে শর্ত জুড়ে দেয় করিমা। বলে, কেবল স্বামীর হাত-পা বেঁধেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে দেবে সে। ওই অবস্থায় থাকায় স্বামী হারুন এতেও রাজি হয়ে যায়। পরে গামছা দিয়ে হাত-পা বেঁধে পাটের রশি গলায় পেঁচিয়ে স্বামী হারুনের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্ত্রী করিমা।

গত বুধবার স্বামী হত্যার দায় আদালতে এভাবেই স্বীকার করেছে অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী কারিমা। গত মঙ্গলবার স্বামী হত্যার এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটলেও সংবাদমাধ্যমে এ খবর আসে দুদিন পর অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে।

এদিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কারিমা খাতুন। স্বামী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে সে। এর আগে, শ্বশুর বয়জুল মণ্ডলের করা মামলায় তাকে আদালতে নেওয়া হয়।’

জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি আরও বলেন, ‘ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে হারুনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কারিমার। এই ১৭ দিনে মাত্র দিন স্বামীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করে ওই নববধূ। কিন্তু এই তিন দিনের কোনোদিনই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেননি স্বামী। এ নিয়ে বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। গত মঙ্গলবার রাতে হারুন শারীরিক সম্পর্কের আগ্রহের কথা জানায় কারিমাকে। কারিমা এদিনও আপত্তি জানায়। এতে হারুন খুব ক্ষিপ্ত হয়ে কারিমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে ওই শর্ত জুড়ে দিয়ে হত্যা করে স্বামীকে।’

১৪ বছরের এক কিশোরী কীভাবে ২৮ বছরের যুবককে এভাবে হত্যা করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘সার্বিক বিষয়টি আমাদেরও সন্দেহ হয়েছে। আদালতে তোলার পর ওই মেয়েকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তার স্বামীকে অন্যকিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা? প্রতিউত্তরে মেয়ে কিছু জানায়নি।’

ওসি বলেন, ‘যেই কক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে ১০ টাকা দামের একটি হরলিক্সের খালি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের দুই রুম অন্তর জমিতে বিষ দেওয়ার বোতল সদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করেছি। ভিসেরা রিপোর্টে আমরা এই বিষষগুলো উল্লেখ করেছি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেছি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়টিও আমরা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি।’

এ ছাড়া মাত্র ১৪ বছর বয়স্ক কিশোরীর বিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে ওসি আরও জানান, এ বিয়ে যে কাজি পড়িয়েছেন এবং এর সঙ্গে যারাই সংশ্লিষ্ট রয়েছেন সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *