এক বছরের বেশি সময় পর আবার হরতাল। সর্বশেষ হরতাল হয়েছিল রাজধানী ঢাকায় সিটি নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি। এর এক বছরের বেশি সময় পর আজ হেফাজতে ইসলামের ডাকে সারা দেশে হরতাল পালিত হবে। এ হরতালে নাশকতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সারা দেশে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যাত্রাবাড়ী ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজতের নেতাকর্মী নিহত ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজকের ডাকা হরতালে বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানিয়েছে দলটির নেতারা। গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর-পূর্ব গেটে কেন্দ্রীয় ঘোষিত ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
শান্তিপূর্ণ হরতালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সরকারকেই এর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
হেফাজতের হরতালে গতকাল বায়তুল মোকাররমের পৃথক সমাবেশে সমর্থন জানিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হরতাল উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হেফাজতের পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলামের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের পাশের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রধান সড়ক ও মসজিদের সকল গেটে মোট ৫ প্লাটুন পুলিশ অবস্থান নেয়। যেসব হেফাজতের নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসেছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই দেহ তল্লাশি করা হয়।
তবে কর্মসূচির সময় মসজিদের চারপাশে পুলিশ থাকলেও ফটকের সামনে ছিল না পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা। তারা দৈনিক বাংলা এবং পল্টন মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের কয়েক প্লাটুন সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। তবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের সড়কে যানচলাচল উন্মুক্ত ছিল।
বিক্ষোভ কর্মসূচির সভাপতি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আজকের এই সমাবেশ এবং আগে যে হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে তা আমাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমরা বাধ্য হয়েছি। চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের ছেলেদের শহীদ করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররমে হামলা চালানো হয়েছে ন্যক্কারজনকভাবে। যাত্রাবাড়ীতেও হামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ডাকা হরতাল শান্তিপূর্ণ। এ হরতালে বাধা দিলে কঠোর ও লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। আর এ জন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, শুক্রবার ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান। সোনার ছেলেদের বায়তুল মোকাররমে সাধারণ মুসল্লিদের ওপর হামলার ঘটনার গোটা অনুষ্ঠানকে ম্লান করে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না- থাকার কথা নয়। আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে চাই তারা সবাই মিলে সরকারের কাছে চিৎকার করেছি, আহাজারি করেছি, অনুরোধ করেছি যে, এমন একটি মহতী অনুষ্ঠানে ভারতের বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী কসাই নরেন্দ্র মোদিকে আমরা চাই না। এই মোদি বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে, কাশ্মীরের মুসলমানদের হত্যা করেছে। গুজরাটের কালেমায়ে বিশ্বাসী মুসলমানদের হত্যা করেছে। তার হাত মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত।
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের লালিত সন্ত্রাসীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদে হামলা চালিয়ে মসজিদের মাটিকে অবমাননা করেছে। রোববারের হরতালে আমরা দেশবাসীকে বলবো এ দানব সরকারকে না সরালে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়ন হবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করবো। আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই মাঠে থাকবে। হরতালে গাড়ির চাকা ঘুরবে না, অফিস খুলবে না। আদালত বন্ধ থাকবে।