আসন্ন রমজান ও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এবার রমজানকে টার্গেট করে দাম বাড়াতে সক্রিয় হয়েছে সিন্ডিকেট। এ অবস্থায় রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আমদানি বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বাজার স্থিতিশীল রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোনো নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ে, সে জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
রোজার সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে সর্বদা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকে। এবার রমজান শুরুর এক মাস আগেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শক্ত হাতে এসব সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে সামনে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কঠোর
অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবিকে অধিক কার্যকর করার পাশাপাশি মহানগরের বাইরে জেলা ও থানাপর্যায়ে টিসিবির কার্যক্রম বেগবান করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি ও প্রণোদনার আওতায় এনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের আগেই আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানিকারকদের এলসি মার্জিন ও আমদানি শুল্ক কমাতে সহায়তা দিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি এবং টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা। টিসিবির মাধ্যমে এবার ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রমজানে ছোলা, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ এবং ডাল বিক্রি করা হবে।
অন্যদিকে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলো কাজ করবে। চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত এক মাসে চাল, ভোজ্যতেল, মুরগি, আটা, ছোলা এবং চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কয়েকদিন ধরে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নানা উদ্যোগের পরও কমছে না ভোজ্যতেলের দাম। এ অবস্থায় ১৪-১৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। এর আগে চলতি মাসের শেষদিকে পালিত হবে পবিত্র শবেবরাত। এ কারণে রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবদের উদ্দেশে বলা হয়েছে- আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। কোনো নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ে, সে জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা, ডালের দাম স্থিতিশীল এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুরগির দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রুত মুরগি, মাছ, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নেবে, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর রমজানের আগে খাদ্যশস্যের মজুদ, মূল্য ও গৃহীত উদ্যোগের তুলনামূলক একটি পরিসংখ্যান এবং প্রতিবেদন অতিদ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা সচিব খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক খাদ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে দ্রুত চাল জাহাজীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত এবং অন্য কোনো উৎস থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য আমদানি ও ক্রয় করা হবে তা পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রমজানে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে অতিদ্রুত সভা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা কার্যকর করার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের।
পাশাপাশি টিসিবির কার্যক্রম গত বছরের মতো চালু রাখতে হবে। তবে মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত ও জোরদার করতে হবে। বাণিজ্য সচিব এবং টিসিবি চেয়ারম্যান এটি বাস্তবায়ন করবেন। এ ছাড়া আগামী ৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে টিসিবির কার্যক্রম শুরু করে নিত্যপণ্য বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিমূলক সভা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই সভার পূর্বপ্রস্তুতির আগে সচিবরা অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা তাদের নিজ নিজ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সরকার দ্রুত জিটুজি পদ্ধতিতে সরাসরি চাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে দশ লাখ টন চাল আনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, ‘দ্বিগুণ খাদ্য আমদানির জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি বিশাল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানির চিন্তা করছে, যাতে কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়।