বাড়ছে সংক্রমণ। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত ১০০ দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গতকাল। শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই এখন খোলা। গণপরিবহনে ঠাসাঠাসি করে চলাচল করছে মানুষ। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি রীতিমতো ছুটিতে।
শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে বলে নানা আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শীতে সংক্রমণ ছিল বেশ কম। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনসহ কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দোটানায় রয়েছে সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বিশেষ আয়োজন শেষ হলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা কম। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে জোর দিতে পারে। রোববার থেকে পুলিশ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। সরকার ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ২৬শে মার্চ পর্যন্ত নানা কর্মসূচি রয়েছে। যদি সংক্রমণ বেড়েই যায় তার ওপর ভিত্তি করে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ভাবকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলে মনে করি। এটাকে আরো দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। দেশে আবারো করোনার সংক্রমণ ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সন্দেহ হচ্ছে বৃটেনের নতুন স্ট্রেইনের। কারণ এতে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বৃটেনেও এই ধরনের করোনায় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। লকডাউনের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগেও লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছিল, তা কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, জনগণকে মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন করোনা সংক্রমণের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী আচরণকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা যদি আরো দুই সপ্তাহ থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যারা শনাক্ত হয়েছেন তাদেরকে আইসোলেশনে চিকিৎসা দিতে হবে। তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকা নিতে হবে।
ধৈর্য্য ধরুন, বেঁচে থাকলে সবাই বেড়াতে পারবেন: গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশ আয়োজিত নার্সদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেশকিছু বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকারের সব সংস্থা এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনায় দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২টি পরামর্শ দিয়েছে। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা চাই দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। করোনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, তাও চাই। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে কাজ করতে হবে। টিকা নেবেন। লকডাউন আমরা করতে পারবো না। এটা সরকারের সব সংস্থা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামীতে দেখবো কী সিদ্ধান্ত হয়। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড জোরদার করছি। বেড়ানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে জনসমাগম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, গত ১৫ দিনে অন্তত ২০ লাখ লোক কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটিতে ঘুরেছে। কেউ মাস্ক পরেনি। মাস্ক ছাড়া বিয়েশাদিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, এখন সরকার ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুহার বেড়ে গেছে, সংক্রমণ বেড়েছে। করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। দেশের মানুষ এখনো ভালো অছে। কিন্তু যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে কেউই ভালো থাকবে না। করোনা এখনো দেশ থেকে যায়নি। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলেন। বেড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এখনো বেড়ানোর সময় হয়নি। আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন। বেঁচে থাকলে সবাই বেড়াতে পারবেন।