বিক্ষোভ, কফিন মিছিল

Slider বাংলার মুখোমুখি

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দিনব্যাপী আন্দোলন হয়েছে রাজধানীতে। লেখকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয় এই কর্মসূচিতে। প্রেস ক্লাবে উন্মুক্ত ব্যানারে আন্দোলন হয়েছে। সেই সঙ্গে শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হয়েছে আন্দোলন। হয়েছে ভিন্নধর্মী কফিন মিছিল। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড়ে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি সংগঠন প্রায় ২০ মিনিট বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্র ফেডারেশন।

তারা দাবি জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে এই আইনে গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিলে গ্রেপ্তারদের নিঃশর্তে মুক্তি দেয়া। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মইন উদ্দীনসহ জোটের অন্য নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে আল কাদেরী জয় বলেন, অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে এবং আটককৃতদের মুক্তি দিতে হবে। দাবি মেনে না নেয়া হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।

সমাবেশ থেকে ১লা মার্চ ছাত্র জোটের ব্যানারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও এবং ৩রা মার্চ আম-জনতার ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি। আর সমাবেশে ‘জনগণের পক্ষ থেকে’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ঘোষণা করে সংগঠনটি। আইনটিকে ‘কণ্ঠরোধকারী ও নিবর্তনমূলক’ বলে আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনটির প্রতি ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ প্রদর্শন করেন।

কারাগারে লেখকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে কফিন মিছিল করেছে মৌলিক বাংলা নামে একটি সংগঠন। শনিবার বিকাল ৪টায় টিএসসি চত্বরের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশ থেকে মিছিলটি শাহবাগ ঘুরে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। এসময় তারা কালেমা পাঠ করেন। বাংলাদেশের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আবু মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, সব গ্রেপ্তার, গুম, খুন অন্যায়-জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা এই মিছিল করেছি। কারণ বাংলাদেশটাই আজ লাশ হয়ে আছে। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা এ কর্মসূচি দিয়েছি। প্রতিবাদ করেছি। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মৌলিক বাংলার আহ্বায়ক রাসেল আহমদ ও সভাপতি ফরিদ আহমদ প্রমুখ।

যে লেখে, যে কথা বলতে পারে সরকার তাকেই ভয় করে। সবগুলোতো চোর। আমরা চুরির ঘটনা জানি, বর্ণনা করতে পারি। তারা আমাদের ভয় করে। এই ভয় থেকে চুরি ধরা খাওয়ার ভয় থাকে- এই ভয় থেকে তারা বলে- জেলের ভেতর আটকাও বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুুদুর রহমান মান্না।

বৃহস্পতিবার কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মান্না আরো বলেন, হাইসিকিউরিটি জেল বানানোই হয়েছে যারা দাগী, যারা নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এই ধরনের লোকদের জন্য। আমি হয়তো সেরকম মানুষ ছিলাম। আমাকে ওখানে নিয়ে গেছে। ডা. ইরান হয়তো এরকম মানুষ ছিলেন তাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু লেখক মুশতাক কিন্তু ঐ ধরনের মানুষ ছিলেন না। তাকে কেন নেয়া হলো? কারণ সরকার ভয় করে। সরকার মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ভয় করে। সরকার ডা. ইরানকে ভয় করে। সরকার নুরকে ভয় করে, সরকার মুশতাককেও ভয় করে। জেলখানা পর্যন্ত কোনো কথা ছিল না। কিন্তু মানুষটা মারা গেল কীভাবে- কাহিনীটা আমরা জানতে চাই। উনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে। সরকার বলেছে, আমরা অসুস্থ মুশতাককে নিয়ে এসেছি। আর হাসপাতাল বলছে মৃত। মুশতাক মারা গেছে কোথায়?

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো জবাব নাই। এটা একটা জুলুম। এটা লেখা, কথা বন্ধ করবার আইন। এই আইন মানি না। হাজার লোক গুম হয়েছে। ওই গুম হওয়া মানুষদের স্বজনদের আমি ডাকি। আসেন রাস্তায় দাঁড়ান। যে মা-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে তাদের বলবো আসেন রাস্তায় দাঁড়ান। যাদের বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে, তাদের পরিবারকে বলবো আসেন রাস্তায় দাঁড়ান। রাজনৈতিক দল যারা বাইরে আছেন আসেন রাস্তায় দাঁড়ান। আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নাই। আসেন রাস্তায় দাঁড়ান। এই সরকার একটা নাটকের সরকার। তারা বলে আমরা উন্নয়ন করছি। মানুষের পেটে ভাত নাই। একদিন রাজপথে মানুষের ঢল নামবে। দেশে যতগুলো জেলা আছে সমস্ত জেলায় জনগণের ঢল নামবে। আমাদের একটাই আওয়াজ ভোট ডাকাত, ভোট চোর সরকারকে আর চাই না।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া স্পষ্ট। আমরা দায়িত্বশীলরা একত্র হয়েছি। আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কারাগারে যে লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার চেয়ে। বিতর্কিত ডিজিটাল কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে। মুশতাককে জুডিশিয়ারি হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আমাদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজকে ব্যানারের দরকার নাই। আজ একটাই ব্যানার প্রয়োজন সেটা হলো, বাংলাদেশকে রক্ষা করো। আমাদের আর বসে থাকার সময় নাই। যার যার স্থান থেকে আন্দোলন করতে হবে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। আমরা আলোচনা করে নাগরিক পদযাত্রা ও কালো পতাকা মিছিলের তারিখ এবং সময় জানিয়ে দেবো।

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য রাখেন- লেখক রাখাল রাহা, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আলম ব্যাপারী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *