করোনাভাইরাসের ‘উপসর্গ’ ছিল আবুল মকসুদের

Slider বাংলার মুখোমুখি

করোনা-ভাইরাসের টিকা নেয়ার পর গায়ে জ্বর এসেছিল। সঙ্গে কাশি। করোনাভাইরাসের টিকার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এক বা দুইদিন জ্বর থাকে। কিন্তু তার জ্বর কিছুতেই কমছিল না। মাঝে এজন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। পরামর্শ দেয়া হয়েছিল হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এরমধ্যেই অবস্থা একেবারে গুরুতর হয়ে পড়ে।
বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে নিতে নিতেই সব শেষ হয়ে যায়। প্রখ্যাত কলামনিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের তরফে এমন বর্ণনাই পাওয়া গেছে।

সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ মানবজমিনকে জানান, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তারা সপরিবারে করোনার টিকা গ্রহণ করেন। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন গ্রহণের দিনই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের কারণে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই দুর্বলতার কারণেই তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। নাসিফ মকসুদ বলেন, টিকা নেয়ার পর ওইদিন রাতে সবার এক সঙ্গেই জ্বর আসে। পরবর্তীতে সবার জ্বর সেরে গেলেও তার বাবা সৈয়দ আবুল মকসুদের জ্বর সারেনি। তার শরীরের তাপমাত্রা মেপে গড়ে ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পাওয়া যেত। সাধারণত জ্বর আসলে তিনি খেতে পারতেন না। এবারও তিনি খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। নাফিস মকসুদ আরো বলেন, এই অবস্থায় তার বাবাকে নিয়ে ২০শে ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউ-এর একজন অধ্যাপকের কাছে নিয়ে যান। ওই চিকিৎসক তিনি জানিয়েছিলেন, এটা সাধারণ ভাইরাল জ্বর। সেই হিসেবেই তাকে সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা দিয়েছিলেন চিকিৎসক। বাসা থেকে তিনি ওই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিচ্ছিলেন। কিন্তু জ্বর কমেনি। তবে মানসিকভাবে খুব দৃঢ় ছিলেন। মৃত্যুর দিন মঙ্গলবার সকালেও রাজধানীর সড়ক ভবনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন প্রবীণ এই সাংবাদিক। সেলাইবিহীন চিরচেনা সাদা পোশাকে ওই সভায় ভার্চ্যুয়ালি তিনি অংশ নেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বারবার বলছিলেন, তার কষ্ট হচ্ছে। ক’দিন ধরেই তিনি অসুস্থ। জ্বর, কাশি। একাধিকবার তাকে কাশির কারণে কথা থামাতে হয়। কথা বলার ফাঁকে সহকারীর কাছে পানি চেয়ে নেন একবার। মুজিব শতবর্ষের এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রায় ১০ মিনিটের মতো কথা বলেন। জীবনসায়াহ্নে বঙ্গবন্ধুর জীবনের কয়েকটি দিক নিয়েও লেখার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন ওই বক্তব্যে। কিন্তু, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে তার লেখাটি হয়নি বলেও জানান। বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করবেন। তবে এখানেই শেষ না, আমরা তো লেখালেখি করেছিও, আরো করবো। ওইদিন বিকালে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের। ছেলে নাফিস সন্ধ্যায় তাকে বাসার পার্শ্ববর্তী স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই হার্ট অ্যাটাকে সৈয়দ আবুল মকসুদ মারা গেছেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি ওই অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, তার মধ্যে করোনার উপসর্গ ছিল। যেহেতু চিকিৎসক ভাইরাল জ্বর বলেছিলেন তাই করোনার পরীক্ষা করা হয়নি। তাদের ধারণা তিনি করোনায়ও আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে তিনি ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

নাফিস মকসুদ জানান, তার বাবা মৃত্যুর আগের দিন নিজের লেখা ‘নবাব সলিমুল্লাহ ও তার সময়’ বইটি হাতে পেয়েছিলেন। অসুস্থ থাকলেও বইটি প্রকাশ করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী লেখার কাজও তিনি করছিলেন। কিন্তু তা শেষ করে যেতে পারলেন না বলে আক্ষেপ করেন নাসিফ মকসুদ। তিনি বলেন, তার বাবার বহু লেখা অপ্রকাশিত অবস্থায় আছে। এর সঙ্গে অনেক গবেষক, লেখক সংযুক্ত আছেন। লেখাগুলো সংগ্রহের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *