বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় জড়ো হচ্ছে একঝাঁক বিদেশি অতিথি। তাদের এ আয়োজন রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় উদযাপন কমিটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, চলমান ওই কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হবে আগামী ২৬শে মার্চ অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে প্রস্তাবিত আয়োজনটি। করোনার কারণে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হচ্ছে। এতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো এবং উপস্থিতির বিষয়ে যতোটা সম্ভব সংযত এবং সচেতন রয়েছেন আয়োজন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আয়োজনটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি অতিথি নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারেন। সরকারি ও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে দিল্লি। তিনি কেবল ঢাকার আয়োজনেই অংশ নেবেন না, যেতে পারেন টুঙ্গিপাড়ায়ও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদির বিশেষ অনুরাগ বা ভক্তি রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ৩-৪ দিনের ওই সফর হতে পারে। সফরের সম্ভাব্য কর্মসূচি এবং আলোচনার বিষয় চূড়ান্ত করতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা আসছেন দিল্লির বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ নিয়ে আলোচনায় গত মাসে দিল্লি সফর করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মার্চের আয়োজনে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভাণ্ডারী এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ অংশ নিচ্ছেন। মালদ্বীপ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর চূড়ান্ত করে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ সহিদ। ওদিকে ২৬শে মার্চের আয়োজনে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভাণ্ডারী উপস্থিত থাকছেন জানিয়ে ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, একাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছেন- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়েফ এরদোয়ান এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর যৌথ উদযাপনে অংশগ্রহণে যথাযথভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বছরব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই আয়োজনে তাদের সুবিধাজনক সময়ে অংশগ্রহণের আয়োজন চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদানকারী ভুটানের বর্তমান সরকার প্রধান বাংলাদেশেই পড়াশোনা করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ রয়েছে তার। আর তুর্কি প্রেসিডেন্ট আঙ্কারা সফরকারী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ঢাকায় পাঠানো তার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের বিষযটি ব্যক্ত করেছেন। গত নভেম্বরে এরদোগানের দপ্তর বরাবর ঢাকার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে সেগুনবাগিচা নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য, করোনার কারণে প্রলম্বিত হওয়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনেরও আমন্ত্রণ রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় ঢাকা চাইছে ২৬শে মার্চের আয়োজন ছাড়াও বছরজুড়ে বিদেশি হাই প্রোফাইল অতিথিদের বাংলাদেশ সফর হোক। তাছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশন স্বাগতিক দেশগুলোর করোনা সতর্কতা মেনে অনুষ্ঠান করুক। ওইসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং বাংলাদেশকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের জন্মের ৫০ বছরের যৌথ উদযাপনে মুজিবাদর্শ তুলে ধরা ছাড়াও ঢাকা চায় এ সময়ে বিশ্বব্যাপী এমন এক নতুন বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে, যা অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার এক গতিশীল অর্থনীতির দেশ।