গাজীপুর: বিউটি পার্লারে কাজের কথা বলে নওমুসলিম এক কিশোরীকে (১৬) দিয়ে জোরপূর্বক বাসায় আটকে রেখে দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এক নারী কাউন্সিলরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ ওই বাসার অভিযুক্ত কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করেছে। আজ রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযুক্ত কাউন্সিলর রোজীকে গ্রেফতার করে।
জানা যায়, গাজীপুরে বাসায় আটকে রেখে বিউটি পার্লারকর্মী নওমুসলিম এক কিশোরীকে (১৬) দিয়ে জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে গাসিক’র আলোচিত নারী কাউন্সিলর রোকসানা আহমেদ রোজীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১’র সদস্যরা। শুক্রবার রাতে তাকে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-১’র পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। র্যাব-১’র ওই কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণ খান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় র্যাব-১’র একটি দল। এ সময় ওই বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর (১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ড) রোকসানা আহমেদ রোজীকে গ্রেফতার করা হয়। বাসায় আটকে রেখে বিউটি পার্লারকর্মী নওমুসলিম এক কিশোরীকে (১৬) দিয়ে জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে কাউন্সিলর রোকসানা আহমেদ রোজী ও বাড়ির কেয়ার টেকার নুরুল হকসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার জিএমপি’র বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরী। ওইদিনই বাসন থানা পুলিশ নুরুল হককে গ্রেফতার করলেও ঘটনার পর থেকে কাউন্সিলর রোজী পলাতক ছিল।
প্রথম দিনে গ্রেফতারকৃতের নাম- মো: নুরুল হক (৬৫)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ এলাকার মৃত কালু শহা ফকিরের ছেলে এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) নলজানীর গ্রেট ওয়াল সিটি আবাসিক এলাকার মোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর (১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ড) রোকসানা আহমেদ রোজীর মালিকানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার রহমান শপিং মলের আনন্দ বিউটি পার্লাারে প্রায় চার মাস আগে চাকরি নেন নওমুসলিম ওই কিশোরী (১৬)। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানাধীন বড়য়াকোনা এলাকায়। পার্লারে চাকরির পাশাপাশি তাকে দিয়ে গ্রেট ওয়াল সিটি এলাকাস্থিত রোজীর ভাড়া বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হতো।
এরপর ওই কিশোরীকে বাসায় আটকে রেখে বাড়ির কেয়ারটেকার নুরুল হকের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন কাউন্সিলর রোজী। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভিকটিমকে এ দিয়ে কাজে বাধ্য করা হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যায় ভিকটিম। এঘটনায় জিএমপি’র বাসন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের জবরদস্তি করে সেবা প্রদান ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে মঙ্গলবার কাউন্সিলর রোজী ও বাড়ির কেয়ারটেকার নুরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভিকটিম। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ অভিযুক্ত নুরুল হককে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে মামলার প্রধান আসামি রোকসানা আক্তার রোজী পলাতক ছিলেন।