সিলেটে মুসার ডাকে সাড়া দিলেন মামুনুল

Slider সিলেট

শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ও প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। গোটা দেশে ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন এই দু’জন। তাদের সম্পর্ক ছিল বহুমাত্রিক। এর মধ্যে পারিবারিক সর্ম্পকও ছিল। শায়খুল হাদীস জীবদ্দশায় কখনো প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের ডাকে বিমুখ ছিলেন না। বরং ডাকলেই তিনি ছুটে আসতেন পবিত্র ভূমি সিলেটে। পুণ্যভূমির এই রাজপথেও ইসলামী আন্দোলনে মাঠ কাঁপিয়েছেন তারা দু’জন। সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজীরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন মাওলানা হাবিবুর রহমান।

নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী। প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রতিবছর তার মাদ্রাসায় বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করতেন। আর ওয়াজ মাহফিলে প্রায়ই অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। ২০১১ সালে মারা যান শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক। এরপর থেকে কাজীরবাজার মাদ্রাসার জলসা হলেই সেখানে ছুটে আসেন তারই পুত্র মাওলানা মামুনুল হক। প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মাওলানা মামুনুল হক প্রতিবছরই আসতেন মাদ্রাসার ওয়াজ-মাহফিলে। করেন বয়ান। ২০১৮ সালে মারা যান প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। এরপর থেকে কাজীরবাজার মাদ্রাসার হাল ধরছেন তারই পুত্র মাওলানা সামিউর রহমান মুসা। তরুণ এই ইসলামী নেতার হাত ধরে মাদ্রাসার কার্যক্রম এখন এগিয়ে চলছে। রয়েছে সিলেটের প্রবীণ আলেম-উলামাদের সুনজরও। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসার ওয়াজমাহফিল এলেই বসে আলেম-উলামাদের মিলনমেলা। দূর-দূরান্ত থেকে উলামারা প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যেমনি আসতেন তেমনি তার মৃত্যুর পরও তারা ছুটে আসেন। এবারের এই মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলটি ব্যতিক্রম। প্রতিবছর মাহফিলের আগে ওয়াজিগণের নাম প্রচার করা হতো। কিন্তু এবার আর তা করা হয়নি। দু’দিনব্যাপী এ ওয়াজ মাহফিলে সিলেটের প্রখ্যাত উলামারা বয়ান রেখেছেন। মূল আকর্ষণ ছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। তবে মাওলানা মামুনুল হক আসবেন কি না- এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে মুসল্লিরা। দু’দিনব্যাপী এ মাহফিলের প্রথম দিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘোষণা দেয়া শুরু হয়। বলা হয়- রাত ১০ টার পর মাওলানা মামুনুল হক তার বক্তব্য রাখেন। এতে সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে মুসল্লিদের সংখ্যা। এশার নামাজের পরপরই মাদ্রাসার পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। সামনের রাস্তায়ও মুসল্লিদের ভিড় বাড়ে। এ সময় মূল মঞ্চে বক্তৃতায় ওঠেন সিলেটের প্রখ্যাত আলেম দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। তিনি ইমান ও আমলের উপর দীর্ঘ সময় বক্তৃতা করেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের করোনার রোগীদের সুস্থতার জন্য দোয়া করা হবে। রাত ১০টার দিকে দোয়া শুরু করেন মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। এ সময় সিলেটের শেখঘাট পয়েন্ট থেকে তোপখানার পার্কভিউ হাসপাতালের সামন পর্যন্ত মুসল্লিদের ভিড় বাড়ে। সবাই এসেছেন মাওলানা মামুনুল হকের বক্তৃতা শুনতে। কয়েকজন মুসল্লি জানিয়েছেন- গত কয়েক বছর ধরে সিলেটের ওয়াজ মাহফিলে মাওলানা মামুনুল হক হচ্ছেন প্রধান আর্কষণ। মাওলানা মামুনুল হক দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে তার পিতার মতো সিলেটকেই বেশি প্রাধান্য দেন। কিন্তু এবার সিলেটের জলসায় মাওলানা মামুনুল হকের উপস্থিতি কম। এ কারণে কাজীরবাজার মাদ্রাসায় মামুনুল হক আসার খবরে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। রাত ১১ টার পর সবাই তখন মাওলানা মামুনুল হকের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি আসবেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ তিনি মঞ্চে হাজির। বাইরের অপেক্ষা থাকা হাজারো মুসল্লি অবাক হলেন। কাজীরবাজার মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানিয়েছেন- মাওলানা মামুনুল হককে মাদ্রাসার প্রধান ফটক দিয়ে মঞ্চে তোলা হয়নি। বিপুল সংখ্যক মুসল্লিকে সরিয়ে দিয়ে, ভিড় সামলে তাকে নিয়ে আসা ছিল কষ্টকর। এ কারণে মাদ্রাসার পেছনের অংশ দিয়ে তাকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। সিলেটের কাজীরবাজার মাদ্রাসার বর্তমান খেতমতদার মাওলানা সামিউর রহমান মুসার সঙ্গে মামুনুল হকের সেই পারিবারিক সম্পর্ক বিরাজমান। এ কারণে কাজীর বাজার মাদ্রাসায় মাওলানা মামুনুলকে নিয়ে নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানান ওই শিক্ষক। এদিকে- কাজীরবাজার মাদ্রাসার মঞ্চে মাওলানা মামুনুল হকের বক্তৃতায় সময় সভাপতিত্ব করেছেন সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। কাজীরবাজার মাদ্রাসায় এবার দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখেননি মাওলানা মামুনুল হক। পৌনে একঘণ্টার বক্তব্যে তিনি কিছু সময় বসে এবং মুসল্লির কথা বিবেচনা কিছু সময় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন। এ সময় তিনি বলেন- উলামায়ে কেরামদের গৌরবকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, মেনে নেবেও না। রাসূল (সা.) উম্মতের আমানতের জিম্মাদার হিসেবে উলামায়ে কেরামদের রেখে গেছেন। সুতরাং আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের জন্য, মানুষকে হেদায়েতের জন্য উলামায়ে কেরামদের প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে। বলেন- যদি উলামা-কেরামরা জিম্মাদারীর দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে তাদেরকেও আল্লাহ্র দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আর উলামায়ে কেরামদের প্রদর্শিত পথে চলার জন্য তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তৃতা শেষে মাওলানা মামুনুল হক মোনাজাতও করেন। বয়ান শেষে রাতে মাওলানা মামুনুল হক ঢাকায় ফিরে গেছেন। সিলেটের কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা জানিয়েছেন- মাওলানা মামুনুল হক ছাড়া কাজিরবাজার মাদ্রাসার জলসা কল্পনা করা কঠিন ছিল। শায়খুল হাদীস ও প্রিন্সিপাল হুজুরের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। দুই জনের মৃত্যুর পরও আমাদের সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তিনি বলেন- জামেয়ার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল মাওলানা মামুনুল হক মাদ্রাসায় আসবেন। তবে- যেখানেই তাকে বাধা দেয়া হবে সেখানেই এবার জামেয়ার জলসা হবে। কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। এজন্য প্রশাসন সহ সিলেটের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এদিকে, গত শনিবার রাতে ছাতকের ওয়াজ মাহফিলেও বক্তৃতা করেন মামুনুল হক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *