মদ ও নারী কেলেঙ্কারি থাকলে আওয়ামী লীগ নেতা হওয়া যাবে না : কাদের মির্জা

Slider রাজনীতি

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, মদ ও নারী কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি আওয়ামী লীগ নেতা হতে পারবেন না।

সোমবার সকালে বসুরহাটের রূপালী চত্বরে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক নির্বাচনী সভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের নেত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে, মাদক কি এখন চলে না? প্রশাসনের কাজ কী? জিরো টলারেন্স কোথায়? নেত্রীকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। যারা এমপিসহ জনপ্রতিনিধি আছেন তারা মদ খেতে পারবেন না, নারী কেলেঙ্কারি করতে পারবে না। এ ঘোষণা দিতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা হতে হলে মদ ও নারী কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত থাকতে পারবে না। তা হলে এসব বন্ধ হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন মনে করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছে তারা। নেতাদের অপকর্মে দুর্নীতিবাজ প্রশাসন কি জড়িত নয়? তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিছু নেতাও এদের সাথে আছে। প্রশাসনের যেসব লোক দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

এ সময় বড় ভাই ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের মিনিস্টার, তিনি এই এলাকার সংসদ সদস্য। এখানে ভোট ডাকাতি, মারামারি-হানাহানি হলে ওনার কিছু দায়িত্ব আছে না? উনার উপর কি দায়িত্ব বর্তায় না? এই ঝামেলা কি উনার উপর বর্তায় না? তার কি দুর্নাম হবে না? আমি উনার শুভাকাঙ্খি নই, যারা শুভাকাঙ্খি তারা বলবেন যাতে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।‘

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি পেটে টিউমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আরেকটি টিউমার ধরা পড়েছে। ওই টিউমারটি ছিলো আরো খারাপ। আমি মনে করেছিলাম আপনাদের সাথে আর দেখা হবে না। কিন্তু আল্লাহ’র অশেষ রহমতে, আমার মা-বাবার দোয়া আছে, আপনাদের দোয়া ও আর্শীবাদে আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। ফিরে এসে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আমাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলাম, যে ক’দিন বেঁচে থাকি সাহস করে সত্য কথা বলবো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমার কাছে নির্বাচন বড় নয়। আমার কাছে প্রতিজ্ঞা বড়। এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমি বাংলাদেশের অনিয়মের বিরুদ্ধে বলিনি, আমি নোয়াখালীর অনিয়মের বিরুদ্ধে বলেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। আপনারা সহযোগীতা করবেন। নির্বাচনকে কালিমা লাগানোর জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র বিভিন্ন জায়গা থেকে হচ্ছে। মাইজদী ও ফেনী থেকে হচ্ছে। আজকে ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব উনারা কী করছে আমি বুঝি না। আমাকে গালিগালাজ করলো, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে, যুব মহিলা লীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে। মোবাইল ট্র্যাক করে নাম পরিচয় সবকিছু পাওয়া গেছে। আজকে তিন দিন কিছুই হয়নি। আমি কিছু বললে কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষেপে যান, তাদের মনে বড় কষ্ট।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলবো, যেকেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হবে ওই কেন্দ্র বন্ধ করে দিবেন। আমি খোদাকে হাজির-নাজির করে বলছি, যদি নির্বাচনের দিন আপনারা দেখেন আমি অনিয়মের নির্বাচন করেছি, খোদার কাছে প্রার্থণা করি আমি অনিয়মের নির্বাচন করলে ওই দিনই আমার মৃত্যু দেয়। এক ভোট পেলেও আমি প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাব। আবার দলের কর্মকাণ্ড শুরু করবো। আবার আপনাদের সাথে থাকবো। আমি আপনাদের সাথে ছিলাম, থাকবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আজ ষড়যন্ত হচ্ছে, কারো ঘরে আগুন লাগিয়ে দিবে, ঝামেলা সৃষ্টি করবে, যেখানে বিএনপি বেশি ওই ঘরের সাথে আগুন লাগাবে, সেখানে জামায়াত বেশি ওই ঘরের সাথে আগুন লাগাবে, যেখানে আওয়ামী লীগ বেশি ওই ঘরের সাথে আগুন লাগাবে, উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। একরাম চৌধুরীর বাড়িতে একরাম চৌধুরীর ছেলে, আরেক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ মিটিং করে এখানে অস্ত্র এনেছে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি, প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

আবদুল কাদের মির্জা হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে যদি একটি মায়ের বুক খালি হয়, যদি কোম্পনীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রহসন হয়, যদি একটি জাল ভোটও কোথাও পড়ে, যদি কারো ঘরে আগুন লাগে এটির দায়িত্ব নোয়াখালীর ডিসি-এসপিকে নিতে হবে। আমি আমার জীবন ও রক্ত দিয়ে হলেও ১৬ তারিখের নির্বাচন নিরপেক্ষ করবো।’

তিনি বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের বলেন, ‘যদি কোনো অনিয়ম হয় আমাকে বলবেন, আমিসহ ভোট বর্জন করব। বিএনপি প্রার্থীর সাথে কথা বলেছি, আমরা এক আছি, আপনারা কোনো ঝগড়া করবেন না। নির্বাচনের সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা যদি কোনো অনিয়মে জড়ায়, এই কোম্পানীগঞ্জ থেকে তাদের বিদায় নিতে হবে। কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন একরামুল করিম চৌধুরীর মাস্ক লাগিয়ে চলেন, একটা জেলা প্রশাসক কীভাবে এক ব্যক্তির মাস্ক লাগায়? বিচার কি আমরা পেয়েছি? এদের থেকে কী আশা করা যায়?

তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু প্রার্থী প্রতিপক্ষকে ধমক দিচ্ছেন, এটি বন্ধ করেন, যাদের ধমকায় আমার কাছে বলবেন, আমি আপনাদের সুনির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। ধমকানোর মাশুল তোমাদের দিতে হবে।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্য দিবালকে হত্যা করে গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। নিজাম হাজারীর বিচার হয়নি। জবাব তোমায় দিতে হবে, লুটপাট কীভাবে চলছে খবর নেন। একরাম চৌধুরী চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি করছে, হাজার হাজার কোটি টাকা। আমি যখন গ্যাসের কথা বলি, কিছু লোকের কথা বলি যাদের কারণে পাইনি। তারা বলে আমি পাগল, আমি উন্মাদ।’ এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *